এজাক্স জুট মিল বেদখল থেকে উদ্ধার ও চালুতে পদক্ষেপ দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম
খুলনার এজাক্স জুট মিলটি বেদখল থেকে উদ্ধার ও পরিবেশ রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কাওসার জামান বাবলা। জুট মিলটিকে ঘিরে একটি চক্র নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার (১৭ আগস্ট) খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, খুলনার মীরেরডাঙ্গায় গড়ে ওঠা এজাক্স জুট মিলটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী সাজ্জাদুর রহমান লিংকন ও তার দলবলসহ ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে দখল করে নেয়। সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান ও তার ভাই শাহাবুদ্দিনের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় তারা বিদেশে পণ্য রপ্তানি বাধাগ্রস্ত করে মিলটি বন্ধ করতে বাধ্য করে। এতে হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, দখলদাররা আমার মিলের মূল্যবান মেশিনারিজ, ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম, মেইন ওয়ার্কশপের যন্ত্রপাতি, স্টোর রুমে মালামাল লুট করে। তারা স্কুলঘরের টিন বাউন্ডারি ওয়ালের ইট খুলে নিয়ে যায়। মিলের আভ্যন্তরীণ রাস্তা নষ্ট করে দেয়।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কাওসার জামান বাবলা লিখিত বক্তব্যে বলেন, লিংকন খানজাহান আলী ও দিঘলিয়া এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক। এমন কোন অপকর্ম নেই, যার সঙ্গে লিংকন জড়িত নয়। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা থাকলেও তিনি সকল আইনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
কাওসার জামান বাবলা বলেন, মিলটি দখলের পর লিংকন মিলের ৫০ একর খালি জায়গায় বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক সার মজুদ করে স্যারের ব্যবসা করে আসছে। মিলের ফাঁকা জায়গা দখল করে ২০১৫ সাল থেকে প্রতি মাসে ভাড়া ও সারের ব্যবসা করে ৩০ লাখ টাকা করে উপার্জন করছে। বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক সার মজুদের ফলে মিল ও আশেপাশের এলাকায় পরিবেশ প্রতিনিয়ত দূষিত হয়ে বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে। মিল এলাকায় বসবাসরত মিলের প্রায় তিনশত শ্রমিক কর্মচারী তাদের পরিবার-পরিজন ও শিশু সন্তান এতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
তিনি বলেন, মিলটি পুনরুদ্ধার ও পরিবেশ রক্ষায় মজুদকৃত রাসায়নিক সার অপসারণের ব্যাপারে ২০১৯ সালের ১২ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা সচিব, ২৩ মে খুলনা জেলা প্রশাসক ও ১ জুন পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন করি। কিন্তু লিংকন তার সন্ত্রাসী বাহিনী এতই শক্তিশালী যে, আমার আবেদনে প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
কাওসার জামান বাবলা বলেন, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার একজন ব্যবসায়ী। বিগত সময়ে ক্ষমতাসীনদের আক্রোশের শিকার হয়েছি। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এখন সর্বশান্ত। আমি রংপুর সিটি কর্পোরেশনে ২০১২ ও ২০১৭ তাহলে দু’বার বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। এটি আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব পালন করছেন। আমি ন্যায় বিচার বঞ্চিত ও জুলুমের শিকার। আমার মিলের হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন। বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমি মিলটিতে সরেজমিন তদন্ত, দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাই। একই সঙ্গে মিলটি পুনরায় নতুনভাবে চালু করে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান ও দেশের অর্থনীতির অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে পারেন তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাই।
তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষের কর্মক্ষেত্র ও শতভাগ রপ্তানিমুখী বেসরকারি পাটকল এজাক্স জুট মিলটি রক্ষার জন্য দীর্ঘ প্রায় এক দশক ধরে সরকার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করেছি। কিন্তু অবৈধ দখলদার, ক্ষমতার দাপট ও দাম্ভিকতা, অনিয়ম, দুর্নীতিতেই সবকিছু ধ্বংস হয়েছে। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আজ আমি নিঃস্ব হতে চলেছি। জীবন নাশের একাধিক চেষ্টার পরও মহান আল্লাহর অপর কৃপায় এখনও বেঁচে আছি। এখন নতুন করে শ্রমজীবী হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছি।
নুরুজ্জামান/টিপু