নিখোঁজের ১২ দিন পর হাসপাতালে মিলল আল-আমীনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ
শরীয়তপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
মীর মোহাম্মদ আল-আমীন
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিজয় মিছিলে গিয়ে নিখোঁজ ছিলেন শরীয়তপুরের মীর মোহাম্মদ আল-আমীন। ১২ দিন পর শনিবার (১৭ আগস্ট) তার গুলিবিদ্ধ মরদেহ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে খুঁজে পেয়েছেন স্বজনরা। তাকে শহীদের তালিকায় নাম, পরিবারের ভরণপোষণ ও হত্যাকারীর বিচারের দাবি জানান স্বজনরা।
রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সভায় এ দাবি রাখেন তারা। এ সময় জেলা প্রশাসক সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিঝারি ইউনিয়নের দক্ষিণ মগর এলাকার ইসমাইল মীর মালত ও জিয়াসমিন বেগম দম্পত্তির বড় ছেলে মীর মোহাম্মদ আল-আমীন (২৯)। পাঁচ মাস আগে সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন তিনি। এরপর তিনি ঢাকাতেই থাকতেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর সাভার এলাকায় আনন্দ মিছিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছিলেন আল-আমীন। এ সময় তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট থেকে লাইভ করছিলেন। হঠাৎ লাইভটি বন্ধ হওয়ার পর থেকে তিনি নিখোঁজ হন। পরে বিভিন্ন হাসপাতালে খুঁজেও তার সন্ধান মেলেনি। পরে ১২ দিন পর শনিবার (১৭ আগস্ট) শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে তাঁর মরদেহ খুঁজে পায় স্বজনরা। পরে তার মরদেহ নিজ বাড়িতে আনা হয়।
নিহতের বন্ধু সরল বলেন, ‘আমার বন্ধু প্রথম থেকে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। এরপর গত ৫ আগস্ট বিজয়ে মিছিলে অংশ নিয়ে লাইভ করছিল। হঠাৎ লাইভটি বন্ধ হয়ে গেলে এরপর থেকে ওর সন্ধান পাইনি। অনেক হাসপাতালে ঘুরেছি। পরে ১২ দিন পর ঢাকার একটি হাসপাতালের মর্গে ওর লাশ খুঁজে পাই। ওর কপালে গুলির ছিদ্র ছিল।’
নিহতের ছোট বোন আফলান সিনথিয়া বলেন, ‘আমার ভাই তো সশস্ত্র ছিল না। আনন্দে মিছিলে অংশ নিয়েছিল। আমার ভাইকে কেন এভাবে হত্যা করা হলো। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরীয়তপুরে জেলার একজন সমন্বয়ক সাজ্জাদ শোভন বলেন, মীর মোহাম্মদ আল-আমীনের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর, তার স্বজনদের দাবিগুলো ন্যায্য এবং যুক্তিসঙ্গত। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একজন সাহসী সৈনিক হিসেবে আল-আমীন শহীদের মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য। তাকে শহীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা উচিত। যারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার করা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে এমন ঘটনা আর কখনও না ঘটে। সরকারের উচিত এ দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা এবং প্রয়োজনে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
শরীয়তপুরের নড়িয়ায় আল-আমিনের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ। তিনি জানান, সরকারের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে জানাজায় অংশগ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া শহীদদের স্মৃতির সংরক্ষণের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। বিচার সংক্রান্ত বিষয়গুলো ঢাকায় সম্পন্ন হবে, এবং আল-আমিনের পরিবার চাইলে মামলা দায়ের করতে পারবে, যা ঢাকায়ও করা যাবে।
নিহতের পরিবারের পাশে থেকে সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
আকাশ/বকুল