গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে ছিল স্বাধীন, অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ
রফিক সরকার, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) || রাইজিংবিডি.কম
আহত স্বাধীন
গাজীপুরের শ্রীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে সরকার পতনের পর গত ৫ আগস্ট বিজয় মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি মাওনা পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ের কাছাকাছি আসার পর হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে কিশোর স্বাধীনের গলায়। গুলিটি গলার এক পাশ ভেদ করে অপর পাশ দিয়ে বের হয়। সঙ্গে সঙ্গে সড়কে লুটিয়ে পড়ে কিশোর স্বাধীন।
প্রথমে স্থানীয় লোকজন ভেবেই নিয়েছিলেন স্বাধীন মারা গেছেন। যে কারণে কেউ তাকে হাসপাতালে নেয়নি। আহত অবস্থায় রাস্তার পাশে তিনি পড়ে ছিলেন প্রায় ২ ঘণ্টা। পরে স্বাধীন নড়াচড়া করলে ও গোঙানির শব্দ পেয়ে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন তার বাবা-মা ও স্বজনরা। স্বজনরা অটোরিকশায় করে রাত ৮টার দিকে তাকে নিয়ে যান ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ২ দিন থাকার পরও মিলেনি কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা। যন্ত্রণায় কাতর ছেলকে বাঁচাতে পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে ভর্তি করেন অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে অর্থাভাবে মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে স্বাধীনকে বাড়িতে নিয়ে আসেন পরিবারের লোকজন। বর্তমানে কিশোর স্বাধীনের প্রতিটা মুহূর্ত কাটছে যন্ত্রণায়।
আহত স্বাধীনের বাড়ি নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার চারখালৌজা গ্রাম। তারা বাবা আব্দুস সাত্তার একজন সবজি বিক্রেতা। তিনি ভ্যানে করে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর বাজারে সবজি বিক্রি করেন। মাওনা উত্তরপাড়া গ্রামের সেলিম মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকেন তারা। অসহায় পরিবারে বাবাকে ব্যবসায় সহায়তা করতেন স্বাধীন।
স্বাধীনের বাবা আব্দুস সাত্তার জানান, দুই মেয়ে ও এক ছেলে তার। অর্থাভাবে নিজ জেলা ছেড়ে গাজীপুরে এসেছেন। অনেক কষ্ট করে সংসার চলতো তাদের। ছেলে স্বাধীনের গুলি লাগার পর থেকে চারপাশে অন্ধকার নেমে এসেছে। স্বাধীন স্থানীয় মেধাসিড়ি স্কুল থেকে ১০ম শ্রেণিতে পড়ার পর অভাবের কারণে আর পড়তে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘গত ৫ তারিখে (৫ আগস্ট) বন্ধুদের সঙ্গে বিজয় মিছিলে যায় স্বাধীন। ঘটনার সময় সে মাওনা পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে আটকা পড়েছিল। সে সময় সেখানে গোলাগুলি চলছিল। একটি গুলি স্বাধীনের গলার এক পাশ দিয়ে ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। চিকিৎসার জন্য ওকে (স্বাধীন) সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে থেকে ছেলেকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ঋণ করে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চিকিৎসকরা আরও কয়েকদিন থাকতে বলেছিলেন। আর্থিক সংকটের কারণে স্বাধীনকে বাড়িতে নিয়ে আসি। এখন ঠিকমতো খাবার-ওষুধ কিনতে পারছি না।’
স্বাধীনের মা হাজেরা খাতুন বলেন, ‘অর্থের অভাবে মাঝপথে ছেলের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। ছেলের পেছনে ছুটতে ছুটতে তার বাবার ব্যবসাও বন্ধ। আমাদের সবার চোখেই এখন অন্ধকার।’
//মাসুদ