ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৮ ১৪৩১

ছাত্র-আন্দোলনে স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা স্ত্রী ফাতেমা খাতুন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৯, ২২ আগস্ট ২০২৪   আপডেট: ১০:২৩, ২২ আগস্ট ২০২৪
ছাত্র-আন্দোলনে স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা স্ত্রী ফাতেমা খাতুন

ইউসুফ শেখ। ফাইল ছবি

ইউসুফ শেখ। সরকারি হাসপাতালে চাকরি করতেন। তবে ছিলো না বেতনের ব্যবস্থা। আয়ের রাস্তা ছিলো সেবা গ্রহীতাদের টিপস। চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানটির ব্লাড ব্যাংকে কাজ করার সময় গ্রাহকরা খুশি হয়ে যা দিতেন তাই ছিলো তার একমাত্র উপার্জনের উৎস। এতে কোনো রকমে খেয়ে পরে বাঁচার ব্যবস্থা হয়েছিলো। কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ার মৃত এদাত আলীর ছেলে ইউসুফ। সেখানেই বস্তিতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে স্ত্রীসহ গুঁজেছিলেন মাথা। সেই ঘরে এখন শুধুই আহাজারি চলছে। কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন গত ৫ আগস্টের আন্দোলনে স্বামী হারিয়ে নিঃস্ব ফাতেমা খাতুন।

নিহতের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন জানান, শেখ হাসিনার পতনের দিন গুলি ও মারধরে গুরুতর আহত হয়েছিলেন ইউসুফ। তাকে উদ্ধার করে তারই কর্মস্থল কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। তখন ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার লাশ বাড়িতে এনে দাফন করা হয়। তার শরীরে ছররা গুলি ও বড় গুলি পাওয়া গেছে। এছাড়া দেহের বিভিন্ন স্থানে মারধর ও কোপানোর চিহ্ন ছিলো। 

তিনি আরও জানান, তাদের সংসারে একমাত্র সন্তান সীমা খাতুন। তাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই বস্তিতে পার্শ্ববর্তী একটি ঘর ভাড়া নিয়ে সংসার করছেন তার মেয়ে। তার স্বামী রিকশা চালান। এতে তাদের দিন টেনেটুনে চলে যায়।

নিহতের মেয়ে সীমা বলেন, বাবার চাকরি সরকারি প্রতিষ্ঠানে হলেও কোনো বেতন ছিলো না। মানুষ যা দিত তাতেই সংসার চলত। মাও অসুস্থ। বাবার শোকে তিনি আরও ভেঙে পড়েছেন। নিয়মিত ওষুধপথ্য চালিয়ে যেতে না পারলে তিনিও হয়তো বিছানায় পড়ে যাবেন। আমাদের সংসারও সচ্ছল না, নইলে মায়ের জন্য কিছু করতে পারতাম। 

বাবার মৃত্যুতে দুঃখের সাগরে ডুবে গেছেন মা। কে তাঁর ভরণ পোষণ করবে। চিকিৎসাপাতির খরচই বা কে চালাবে। সরকার কোনো ব্যবস্থা করলে দুমুঠো খেয়ে-পরে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন মা। একই সঙ্গে বাবার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা ৭৬ জনের নামে মামলা করেছি। আসামিদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী।

নিহতের স্ত্রী ফাতেমা আরও বলেন, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কিছু অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তা দিয়ে হয়তো কিছুদিন চলা যাবে। এরপরে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব, কার কাছে হাত পাতবো। স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা করলে নিশ্চিন্তে থাকতে পারতাম।

জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের পতন আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারকে আমাদের নেতা তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। আমরা প্রতি মাসে তাদের সহযোগিতা করব বলে ঠিক করেছি। তারা দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে, আমরা তাদের পাশে আছি সব সময়।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, ৫ তারিখের সংঘর্ষে নিহত ইউসুফের মেয়ে সীমা ৭৬ জনের নামে মামলা করেছেন। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কাঞ্চন/ইমন


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়