ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামত করেও রক্ষা মেলেনি, দুর্ভোগে ১২ হাজার মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম
খুলনায় স্থানীয় লোকজন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড মিলে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। ভদ্রা নদীর জোয়ারের পানির তোড়ে বাঁধটি আবারো ভেঙে গেছে। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামে বাঁধটির প্রায় ৪০০ ফুট ভেঙে যায়।
এর আগে, শত শত স্থানীয় লোকজন ভাটার সময় বাঁশ, চাটাই, বস্তা ও বালুসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা শুরু করেন। নদীতে জোয়ার আসলে পানির তোড়ে ভেঙে যায় বাঁধটি। ফলে লোকালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করে পানি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ১২ হাজার মানুষ।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে বাঁধ জোড়া লাগানো চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ভদ্রা নদীর জোয়ারের অতিরিক্ত পানির চাপে পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের ২২ নম্বর পোল্ডারের কালিনগর বাওয়ালি বাড়ির দক্ষিণ পাশে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৩০০ ফুটের বেশি এলাকাজুড়ে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। তখন থেকেই প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করে। এলাকাবাসী বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করেও পানির তোড়ের কারণে ব্যর্থ হন।
ভুক্তভোগী কালিনগর গ্রামের হরষিত মণ্ডল বলেন, ‘বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে কালিনগর, গোপী পাগলা, তেলিখালী, সৈয়দখালী, খেজুরতলা, সেনের বেড়, হাটবাড়ি, ফুলবাড়ি, বাগীরদানা, দুর্গাপুর, দারুল মল্লিক, হাবিখোলা ও নোয়াইসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মানুষজন কী পরিমাণ দুর্ভোগে আছে- তা বর্ণনা করে বোঝানো যাবে না।’
আলম ব্যাপারী বলেন, ‘পানিতে সদ্য রোপণকৃত ধান ও বীজতলাসহ সব কিছু তলিয়ে গেছে। কোথাও খাবার পানি নেই। অনেকের ঘরে খাবার পর্যন্ত নেই। সবকিছু ভেসে গেছে। বাথরুম তলিয়ে আছে পানিতে। রাতে যে কীভাবে মানুষ থাকবে আল্লাহ ভালো জানেন।’
দেলুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিপন কুমার মণ্ডল বলেন, ‘বেড়িবাঁধের ভেঙে যাওয়া স্থানটি আগে থেকেই নাজুক ছিল। বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারাদের বলা হয়েছিল। তারা কর্ণপাত করেননি। যার কারণে এখন ৫টি ওয়ার্ডের ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এলাকায় কোনো আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় মানুষ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, কালীনগর কলেজ, দারুণ মল্লিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাটবাটি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় একং ফুলবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। যত মানুষ পানিবন্দি তার থেকে সামান্য মানুষের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ হয়েছে। বাকিরা আছে চরম দুর্ভোগে।’
পাইকগাছার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহেরা নাজনীন বলেন, ‘পানিতে ৪০০ ফুট বাঁধ ভেঙে গেছে। প্রায় ৩ হাজার ২০০ পরিবারের ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। দুর্গতদের চিড়া, মুড়ি ও গুড়সহ বিভিন্ন ধরনের শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে।’
খুলনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, অতিরিক্তি পানির চাপে বাঁধ ভেঙে গেছে। শুক্রবার দুইটি স্কেভেটর দিয়ে এলাকার মানুষের সহায়তায় বাঁশ, চাটাই, ব্যাগ, বালু ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করেছি। বাঁধটি টেকেনি। তাই পরবর্তী ভাটার সময় আবার বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করা হবে। সব মালামাল প্রস্তুত আছে।
নূরুজ্জামান/মাসুদ