সাগর থেকে খালি হাতে ফিরছে উপকূলের জেলেরা
ইমরান হোসেন, বরগুনা || রাইজিংবিডি.কম
ঘাটে ফিরে আসা মাছ ধরা ট্রলার
নিষেধাজ্ঞার পর বুকভরা আশা নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন বরগুনা উপকূলের জেলেরা। তবে, সমুদ্র উত্তাল থাকায় সগারে টিকতে না পেরে খালি ট্রলার নিয়ে ফিরতে শুরু করেছেন তারা। জেলেদের অভিযোগ, দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা এবং ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকারের কারণে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের।
জানা গেছে, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৩ জুলাই দিবাগত রাতে সাগরে মাছ শিকারে যেতে শুরু করেন বরগুনা উপকূলের জেলেরা। তবে, ২৫ জুলাই সাগর উত্তাল হওয়ায় ফিরে আসতে শুরু করেন তারা। সে সময় অন্য ট্রলারের সঙ্গে ঘাটে ফেরত আসে পাথরঘাটার ‘এফ বি তরিকুল ইসলাম’ ট্রলারের ১৮ জেলেও।
সাড়ে ৪ লাখ টাকার জ্বালানি ও রসদ নিয়ে সাগরে গিয়ে খালি ট্রলার নিয়ে ফিরে আসায় পুরোটাই লোকসান হয় ‘এফ বি তরিকুল ইসলাম’ ট্রলারের। ১৫ দিন ঘাটে বসে থাকার পর গত ২০ আগস্ট চার লাখ টাকার জ্বালানি ও রসদ নিয়ে আবারো সাগরে যায় ট্রলারটি। এবার উত্তাল সাগরে টিকতে না পেরে বরগুনার পাথরঘাটার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে আসে ট্রলারটি শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে।
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে নেই মাছবিক্রির হাঁকডাক
ট্রলারের মাঝি সাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দফায় দফায় মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। যেটুকু সময় মাছ ধরার সুযোগ পাই সে সময়ে আবহাওয়া খারাপ থাকে। আমাদের গত দুই বছরে অন্তত ৪০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। আজকেও ফিরে আসলাম খালি হাতে। ট্রলার মালিককে কি বলবো বুঝতে পারছি না। সাগর উত্তাল থাকায় টিকতে পারছি না। যারা গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে গেছে, তারা ঢেউয়ের তোড়ে টিকতে না পেরে জাল ফেলে ফিরে এসেছে।’
একই ট্রলারের জেলে রাসেল মল্লিক বলেন, ‘অভাবের সংসারে মাছ শিকার করে স্ত্রী সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেই। এবার মুদি দোকান থেকে বাকিতে চাল-ডাল কিনে দিয়ে এসেছি পরিবারকে। দোকানিকে বলেছি, মাছ বিক্রির টাকায় দেনা শোধ করবো। আবার সাগর থেকে ফিরলাম খালি হাতে।’
একই কারণে সাগর থেকে খালি হাতে ফিরে এসেছে পাথরঘাটার সুলতান ফরাজীর এফ বি ফরাজী ট্রলার। এই ট্রলারের মাঝি জসিম মিয়া বলেন, ‘হঠাৎ করেই সাগর উত্তাল হয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার থেকে ভয়াবহ অবস্থা বঙ্গোপসাগরের। সমুদ্র উত্তাল থাকায় অনেক জেলে সুন্দরবন ও তালতলীর ফকিরহাট এলাকায় নিরাপদ আশ্রয়ে নোঙর করেছে।’
এই ট্রলারের হলা মাঝি (সহকারী মাঝি) মন্নান মিয়া বলেন, ‘৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবার পর সাগরে গিয়ে এক সপ্তাহের মাথায় ফিরে আসতে হয়েছে। দ্বিতীয় বার গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে। যে কারণে লোকসানে পড়েছেন জেলে, ট্রলার মালিকসহ মৎস্যজীবীরা।’
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেলে শাহ-আলী বলেন, ‘অবৈধ জালের ব্যবহার এবং আমাদের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের মাছ শিকারের কারণে সাগর ও মোহনায় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে, গভীর সাগরেও ঢেউয়ের তোড়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জিএম মাসুদ শিকদার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ায় জেলেরা মাছ শিকার করতে না পারায় ফাঁকা পড়ে আছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাট। রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসিন বলেন, ‘আবহাওয়া ভালো হলেই মাছ ধরা পড়বে জেলেদের জালে। কিছু কিছু ট্রলার বাজে আবহাওয়ার মধ্যেও মাছ ভর্তি ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফিরেছে। সাগরে মাছের কমতি নেই। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে প্রচুর মাছ পাবেন জেলেরা।’
ইমরান/মাসুদ