কাপ্তাই বাঁধের গেইট খুললে আতঙ্কের কিছু নেই: কর্তৃপক্ষ
বিজয় ধর, রাঙামাটি || রাইজিংবিডি.কম
ছবি: সংগৃহীত
কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৬টি স্পিলওয়ের গেইট খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (২৪ আগস্ট) রাত ১০টায় বাঁধের গেইট খুলে দেওয়ার কতা থাকলেও কর্তৃপক্ষ একদিন পিছিয়ে আগামী কাল রোববার (২৫ আগস্ট) খুলে দেওয়ার গোষণা দিয়েছে।
বাঁধের গেইট খোলার বিষয়ে ভাটি অঞ্চলকে জরুরি সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে। কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের স্বাক্ষরিত এক জরুরি বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ নিয়ে চাপা আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। তবে কর্তৃপক্ষসহ বিশিষ্টজনেরা বলছেন, এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়ে সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা বা বিপৎসীমার কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে। শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকেল ৩টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির লেভেল ছিল ১০৭.৬৬ এমএসএল (মিন সি লেভেল)। যেখানে সর্বোচ্চ পানি ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল।
এদিকে, কাপ্তাই বাঁধের গেইট খুলে দিলে কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনীয়া, বোয়ালখালী প্লাবিত হবে বলে জনমনে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, লেকের পানির স্তর ১০৮ ফুট ছুঁয়ে ফেলে তখন বাঁধের স্প্রীলওয়ের ১৬টি গেইটের প্রতিটি ২ ইঞ্চি, ৪ ইঞ্চি অথবা ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত খুলে দেওয়া হতে পারে। কখনো কখনো পানির চাপ বুঝে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত খুলে দিয়ে থাকে। এতে লেক থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৮০ হাজার কিউসেক থেকে শুরু করে দুই লাখ কিউসেক পর্যন্ত পানি কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়ে।
সে সময় কর্ণফুলী নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। নদীতে তীব্র স্রোত সৃষ্টি হয়। কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কাপ্তাই হ্রদের নিম্নাঞ্চল রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, বোয়ালখালীতে নদী ভাঙন সৃষ্টি হতে পারে। ফসলী জমি, রাস্তাঘাট প্লাবিত হতে পারে। তবে লেকের ছেড়ে দেওয়া পানিতে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয় না। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি ছাড়া হয়। কখনই এই পানিতে বড় কোনো বন্যার সৃষ্টি হয়নি। সুতারাং আতঙ্কের কোনো কারণ নেই বলে মনে করছেন অনেকে।
এ প্রসঙ্গে, কাপ্তাই প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক ঝুলন দত্ত বলেন, ‘আমরা প্রতিবছরই দেখছি বর্ষাকালে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি হলে বাঁধের ১৬টি গেইট খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু বড় ধরনের বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এবার রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল গত ২দিন বৃষ্টি না হওয়ায় আজকে গুমাই বিলের পানিও নদীতে নেমে গেছে। তবে কর্ণফুলী নদীতে জোয়ার হলে পানির উচ্চতা একটু বেড়ে যায়।’
কাপ্তাই উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. দিলদার হোসেন বলেন, ‘কাপ্তাই বাঁধের গেইট খুলে দিলে কর্ণফুলী নদীার স্রোত কিছুটা বাড়বে। নদীতে স্রোত বৃদ্ধি হওয়ার ফলে জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যাবে। কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী যেসব বসতি আছে তাদেরকে সাবধানতার সাথে দৈনন্দিন কাজ সারতে হবে। বাঁধের পানি ছাড়লে কর্ণফুলীর নদীর পানির উচ্চতা ২-৪ ফুট বাড়তে পারে। এতে বড় ধরনের বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা নাই।’
প্রাণ-প্রকৃতি বিষয়ক গবেষণা সংস্থা বেঙ্গল ডিসকভার এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘কাপ্তাই বাঁধে পানি ছয় ইঞ্চি গেট খোলা হবে। যা প্রতি বর্ষায় স্বাভাবিকভাবেই হয়ে আসছে। আর এই পানি কর্ণফুলী নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে যায় সরাসরি। এতে বন্যা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে কিছু সময়ের জন্য নিম্নাঞ্চলে কিছুটা জলাবদ্ধাতা সৃষ্টি হতে পারে।’
রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার এর চেয়ারম্যান মো. এজাজ বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীতে চট্টগ্রামের মোহরা পয়েন্ট নদীর নাব্যতা নাই। কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়া হলে চট্টগ্রামের মোহরা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত নদীর দুপাশে নিম্নাঞ্চলে কিছুটা জলাবদ্ধতা হতে পারে কিন্তু এতটা না। যদি জলাবদ্ধতা হয় সামান্য কিছু পানি উঠতে পারে। আর এখন জোয়ারও নাই, নিম্নচাপও নাই, পানি নেমে যাবে। কুমিল্লা, ফেনীর মতো বন্যার সম্ভাবনা নাই।’
রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘এবারের ভারী বর্ষণে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, লংগদু ও জুরাছড়ি এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাপ্তাই বাঁধের ৬ ইঞ্চি গেইট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পানি ছাড়া হলে নদীর তীর পরিপূর্ণ হবে। নিচু এলাকায় অর্থাৎ নদীর তীরবর্তী যাদের বসবাস তাদের ঘরবাড়ি কিছুটা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। লেকের পানি স্বাভাবিক লেভেলে এলে গেইট আবার বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
রাঙামাটি/সনি