ঢাকা     বুধবার   ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ||  মাঘ ১ ১৪৩১

শেষ হয়ে গেছে আমার বেঁচে থাকার শক্তি-সাহস: নিহত নাজমুলের মা

মাসুম লুমেন, গাইবান্ধা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১০, ২৬ আগস্ট ২০২৪   আপডেট: ১১:২৪, ২৬ আগস্ট ২০২৪
শেষ হয়ে গেছে আমার বেঁচে থাকার শক্তি-সাহস: নিহত নাজমুলের মা

ছাত্র আন্দোলনে নিহত নাজমুল হোসেন

আমার একমাত্র ছেলে ছিলো নাজমুল। স্বামী মারা গেছে এক বছর আগে। তার আয় দিয়েই চলতো সংসার। বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। আন্দোলনে গিয়ে আমার ছেলে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। আমার বেঁচে থাকার শক্তি-সাহস সব শেষ হয়ে গেছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নাজমুল হোসেনের মা গোলেনুর বেগম মুঠোফোনে এসব কথা বলছিলেন।
 
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত হয়েছেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের নাজমুল হোসেন।  উপার্জনক্ষম একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা গোলেনুর বেগম এখন দিশেহারা।

গোলেনুর বেগম বলেন, এখন কিভাবে আমি দুই মেয়ে নিয়ে সংসার চালাবো, সেই চিন্তায় রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারিনা। যারা আমার বুকের ধনকে (ছেলেকে) চিরতরে কেড়ে নিয়েছে, আমি তাদের সর্বোচ্চ বিচার দাবি করছি।  

এখন পর্যন্ত জেলা বিএনপির সভাপতি ছাড়া আর কেউ তার পরিবারের খোঁজ নেননি বলেও আক্ষেপ করেন মা গোলেনুর। 

কামারপাড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য শাহজাহান মিয়া বলেন, একেবারেই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান নাজমুল হোসেন (২৫)। রিকশাচালক বাবা হামিদুল ইসলামের মৃত্যুর পর মা গোলেনুর কোনভাবেই সংসার চালাতে পারছিলেন না। পরিবারের হাল ধরতে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেয় নাজমুল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যখন উত্তাল গোটা দেশ, তখন নাজমুল হোসেনও তাতে অংশ নেয়। গত ৪ আগস্ট আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় আন্দোলনের সময় পেটে গুলি লেগে গুরুতর আহত হন নাজমুল। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ আগস্ট সন্ধ্যায় মারা যান নাজমুল। এরপর ধার-দেনা করে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সেখানে ১০ আগস্ট স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাইবান্ধার সমন্বয়ক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুয়িদ মুহম্মদ ফাহিম বলেন, দ্বিতীয় স্বাধীনতার এই প্রাক্কালে আমরা আমাদের শহীদ ভাই-বোন এবং আহত ভাই-বোনদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। আহতদের চিকিৎসার সব দায়িত্ব ও নিহতদের পুণর্বাসনের ব্যবস্থা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জেলার শহীদ বীর ভাই-বোনদের পরিচিতি এবং সম্মানিত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় একটি সুনির্দিষ্ট তালিকা প্রস্তুত এবং স্মরণিকা প্রতিষ্ঠার জন্যও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

/টিপু/ 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়