ঢাকা     শনিবার   ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ৩০ ১৪৩১

বন্যা পরিস্থিতি

ফেনী জেনারেল হাসপাতালে বন্ধ ডায়ালাইসিস ও স্ক্যানু সেবা

মো.সাহাব উদ্দিন, ফেনী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১২, ২৮ আগস্ট ২০২৪  
ফেনী জেনারেল হাসপাতালে বন্ধ ডায়ালাইসিস ও স্ক্যানু সেবা

ফেনীতে বন্যার পানিতে সপ্তাহ জুড়ে স্থবির হয়ে পড়েছিল স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। জনপদে পানি কমার সঙ্গে জীবনযাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক হলেও এখনো বন্ধ রয়েছে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ও স্ক্যানু সেবা কার্যক্রম। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবা নিতে আসা রোগীরা। 

বুধবার (২৮আগস্ট) সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে ও হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যায় তলিয়ে যাওয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে পানি নেমে গেলেও কাদা ও স্যাঁতসেঁতে ভাবের কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে জরুরি বিভাগ। বিকল্প হিসেবে প্রশাসনিক ভবনের একটি কক্ষে জরুরি সেবা চালালেও নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স। বন্যা পরবর্তী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আহত ও অসুস্থ রোগীরা হাসপাতালে ছুটে আসলেও পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত সেবা। এছাড়া, হাসপাতালের রান্নাঘর পানিতে ডুবে যাওয়ায় গত এক সপ্তাহ ধরে ভর্তি রোগীদের খাবার সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। 

সোনাগাজী উপজেলা থেকে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালে এসেছিলেন ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ছাদে পা পিছলে পড়ে যান আমার স্ত্রী। তিনি পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। হাসপাতালে এসে এক ঘণ্টা ধরে বসে আছি। এখনো কোনো চিকিৎসা সেবা পাইনি।’ 

ফেনী শহরের একাডেমি সড়কের বাসিন্দা শারমিন আক্তার বলেন, ‘আমার চার মাস বয়সী শিশু সন্তান হাসপাতালের স্ক্যানু বিভাগে ভর্তি ছিল। বন্যায় হাসপাতালে পানি উঠার কারণে গত বৃহস্পতিবার রাথে তাকে বাসায় নিয়ে আসি। এখনো সে অসুস্থ। আজ হাসপাতালে আমার স্বামী গিয়েছিলেন। তাকে জানানো হয়েছে, একনো স্ক্যানু সেবা চালু হয়নি।’ 

পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের ফাহিমা আক্তার বিথি বলেন, ‘আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। প্রাইভেট হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাতে অনেক টাকা খরচ হয়। ফেনী জেনারেল হাসপাতালে তার ডায়ালাইসিস চলছিল। বন্যার পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডায়ালাইসিস বিভাগের সব যন্ত্রাংশ ওপর তলায় তুলে রোগীরদের ছুটি দিয়ে দেন। সপ্তাহ পার হলেও এখনও সেবা কার্যক্রম শুরু হয়নি। কিডনি রোগীদের নিয়ে আমার মতো অনেকে উৎকণ্ঠায় আছেন।’ 

শাহনাজ পারভীন নামে হাসপাতালে ভর্তি রোগী বলেন, ‘গত পাঁচ দিন ধরে শুকনা খাবার খেয়ে বেঁচে আছি। হাসপাতালের আশেপাশের এলাকাগুলোতে সব ধরনের খাবার দোকান বন্ধ। বলে বুঝাতে পারবো না কী ধরনের অসুবিধার মধ্যে আছি।’  

হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজন কামাল উদ্দিন বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতাল থেকে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে না। চিড়া, মুড়ি ও অন্য শুকনো খাবার খেয়ে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনরা খুবই মানবেতর সময় পার করছেন। হাসপাতালে সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। যেহেতু, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে দ্রুত সমস্যা সমাধান করার দাবি জানাচ্ছি।’ 

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আসিফ ইকবাল বলেন, বন্যার কারণে হাসপাতালের সব ভবনের নিচতলা সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে। বাধ্য হয়ে হাসপাতালে দ্বিতীয় তলায় জরুরি সেবা চালু রেখেছি। স্ক্যানু ও ডায়ালাইসিস বিভাগ নিচ তলায় হওয়ায় এখনো সেবা কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। আশা করছি, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সব সেবা কার্যক্রম চালু করা যাবে।’

খাদ্য সরবরাহ বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই হাসপাতালে গলা সমান পানি উঠেছে। রান্নাঘরসহ অনেক কক্ষই পানি নিচে ছিল। এরপর আমরা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে হাসপাতালে অবস্থানরতদের জন্য খাবার ও পানির ব্যবস্থা করেছি। আশা করছি, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) থেকে রোগীরা  রান্না করা খাবার পাবেন।’ 

আরএমও আরও বলেন, ‘বৈরী পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখার সব চেষ্টা রয়েছে আমাদের। এরপরও কিছু রোগীর স্বজন অল্পতেই রেগে হট্টগোল করছেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে তারা খারাপ আচরণ করছেন, এটি  দুঃখজনক। সবাই সহযোগিতা করলে আমরা স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবো।’ 

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়