ঢাকা     বুধবার   ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ||  মাঘ ১ ১৪৩১

নোয়াখালীতে পানি নামছে খুবই ধীরগতিতে

নোয়াখালী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৩, ৩০ আগস্ট ২০২৪   আপডেট: ১১:২৮, ৩০ আগস্ট ২০২৪
নোয়াখালীতে পানি নামছে খুবই ধীরগতিতে

নোয়াখালীতে পর পর দুইদিন ধরেই দেখা মিলেছে সূর্যের। এতে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বন্যার পানি নামছে খুবই ধীরগতিতে। এদিকে পানিবন্দি মানুষ রয়েছে অস্বস্তিতে। 

এ জেলায় এখনো প্রায় ২২ লাখ মানুষ পানিবন্দি। ১৩৩৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে। তারা বাড়তে ফিরতে উন্মুখ হয়ে আছে। বন্যার পানি বৃদ্ধির গতি এতটাই দ্রুত ছিলো যে অধিকাংশ পরিবার ঘরের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরানোর সুযোগও পায়নি। তবে ধীরগতিতে হলেও পানি কমতে শুরু করায় বন্যার্তদের মাঝে আতঙ্ক কমেছে। 

নোয়াখালীর নিকটতম অতীতে এমন বন্যা আর হয়নি। ভয়াবহ এই বন্যার মাঝে অনেক এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো কষ্টকর হয়ে উঠায় দেখা দিয়েছে সমন্বয়হীনতা। অন্যদিকে পুরো জেলায় দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এ ছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না। এরফলেই ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতা। 

এদিকে এমন পরিস্থিতির মধ্যে জেলায় ডায়রিয়া ও সাপেকাটা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

আজাদুল ইসলাম নামে একজন বলেন, পানি নামার গতি খুবই কম। যেভাবে বন্যার অবনতি হয়েছে, সেভাবে কিন্তু উন্নতি হচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, পানি নামার যেসব খাল-নালা-ড্রেন-পুকুর-জলাশয় রয়েছে সেগুলো ভরাট হয়ে থাকাই এই ধীরগতির কারণ। 

জেলার অশ্বদিয়া ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া এমদাদ নামে একজন বলেন, তিনি গত এক সপ্তাহ ধরে এখানে আছেন। পানি বাড়ার গতি এতটাই জোরে ছিলো যে কোনো রকমে এক কাপড়ে এখানে এসেছি। সাথে পুরো পরিবার। গাদাগাদি করে এখানে প্রায় পাঁচ শতাধিক লোক অছে। সে তুলনায় খাদ্য সহায়তা কম।

আমেনা নামে আরেকজন বলেন, পুরো বাড়িতে যে ভাবে হু হু করে বানের পানি ঢুকেছে, তাতে আমাদের ছোট ছোট সন্তানদের প্রাণ নিয়ে এখানে উঠেছি। আমরা গৃহস্থ, সাথে গবাদি পশু। শিশুরা এখনও খাদ্যে কষ্ট পাচ্ছে।

আনিসুর রহমান নামে একজন বলেন, যে পরিমাণ খাল-নালা-জলাশয় দখল হয়েছে সেগুলো এখনও উদ্ধার হয়নি। যে খালগুলো কিছুটা দখলমুক্ত আছে, তার বেশির ভাগই ময়লা-আবর্জনায় ভরা। এ কারণে পানি নামার গতি ধীর।

জামাল হোসেন নামে অন্যজন বলেন, দখলকৃত খালগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধার ও বাকি খালগুলো পরিষ্কার করা হলে বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাবে। আগামীতে যাতে এমন পরিস্থিতির আর না হয় সে ব্যবস্থা প্রশাসনের নিতে হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর জেলা সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধান সড়কগুলোর আশপাশের বাড়িঘর ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর মানুষজন যেভাবে সহায়তা পাচ্ছে, প্রান্তিক এলাকায় সেভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণ যাচ্ছে না। মূলত সমন্বয়হীনতার কারণে দুর্গতদের সবার কাছে সমানভাবে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। এ জন্য ত্রাণ বিতরণে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের সমন্বয় দরকার।

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, নোয়াখালীতে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা জেলা প্রশাসন কাজ করছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গম এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারিভাবে নগদ ৪৫ লাখ টাকা, ১২০০ টন চাল, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ৫ লাখ টাকার পশুখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি ত্রাণ প্রতিদিনই বরাদ্দ এবং বন্যার্তদের মাঝে বিলি হচ্ছে। বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী আনা হলেও তারা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ না করে নিজেদের মতো করে ত্রাণ বিতরণ করে চলে যাচ্ছে। এতে ত্রাণ বিতরণে সমন্বয় ঠিকভাবে হচ্ছে না।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, গত ১২ ঘণ্টায় জেলাতে প্রায় তিন সেন্টিমিটার পানি কমেছে। বৃষ্টি না হলে পানি আরও কমে যাবে।

সুজন/টিপু


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়