ঢাকা     বুধবার   ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ||  মাঘ ২ ১৪৩১

বাজারে কাঙ্ক্ষিত মূল্য মিলছে না পাটের

রবিউল আউয়াল, রাজবাড়ী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৩:১৬, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বাজারে কাঙ্ক্ষিত মূল্য মিলছে না পাটের

রাজবাড়ীতে পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক। খরা-অনাবৃষ্টিতে পাট উৎপাদন ব্যাহত হওয়া, জাগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত খাল বিল না থাকা এবং পাটের কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পাওয়া- ইত্যাদি কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, চলতি বছর রাজবাড়ী জেলায় খুব একটা বৃষ্টিপাত হয়নি। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে যেসব খাল, বিল পানিতে টইটুম্বুর থাকে সেসব এখনও পানি শূন্য। পাট রোপণের পর অনেক ক্ষেতে কৃত্রিম উপায়ে সেচ দিতে হয়েছে। পাট পরিণত হওয়ার পর জাগ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট জায়গা পাননি কৃষকরা। ক্ষেত থেকে অনেক দূরে নসিমন, করিমন, ভ্যানে করে পাট নিতে হয়েছে খালে বিলে। সেসব জায়গায় অত্যধিক পাট একসাথে জাগ দেওয়ায় রং হয়ে গেছে কালো। কোথাও আবার স্বল্প পানিতে দিতে হয়েছে পাট জাগ। এখন চলছে পাট বিক্রির সময়। রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন হাটে কৃষকরা পাট বিক্রি করতে যাচ্ছেন। কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন তারা।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার কামালপুর গ্রামের কৃষক লালন মন্ডল জানান, তিনি চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। দুই বিঘা জমিতে শুধু শ্রমিক বাবদ খরচ হয়েছে ১৯ হাজার টাকা। একেক জন শ্রমিককে দুপুরের খাবারসহ আটশ টাকা করে দিতে হয়। তাও সব সময় শ্রমিক পাওয়া যায়না। এরপর পাট জাগ দেওয়ার সময় অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। জমি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এতে পরিবহন খরচ হয়েছে অনেক। এই দুই বিঘা জমিতে পাট হয়েছে ৯ মণ। গত বৃহস্পতিবার রাজবাড়ীর হাটে আড়াই হাজার টাকা মণ দরে পাঁচ মণ পাট বিক্রি করেছেন। এতে তার খরচও ওঠেনি। যে আশা নিয়ে তিনি পাট চাষ করেছিলেন তা পূরণ হয়নি। বরং নিজের শ্রম, ঘাম সব বিফলে গেছে। গত বছর আট বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। সেবার খুব একটা লাভ হয়নি বলে কমিয়ে দেন এবার। আগামীবার আরও কমাবেন পাট চাষ। অন্য ফসল চাষ করবেন বলে জানান তিনি।

সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের কৃষক শামীম শেখও জানালেন এমন কথা। বলেন, পাট চাষ করে কোনো লাভ নেই। পরিশ্রমই বৃথা। তার এক বিঘা জমিতে পাট হয়েছে পাঁচ মণ। খরচ হয়েছে আট হাজার টাকার মতো। বিক্রি করে পেয়েছেন ১৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে তারা পরিবারের তিনজন যে শ্রম দিয়েছেন তার হিসেব নেই। পাট চাষের জন্য যেভাবে তারা পরিশ্রম করেন তার দাম ওঠেনা।

রাজবাড়ী বাজারের পাট ব্যবসায়ী গদাধর রায় জানান, এ বছর ২২শ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত পাট কেনা-বেচা হচ্ছে। ভালো পাট তিন হাজার টাকা মণ। আর একটু খারাপ পাট ২২শ থেকে ২৫শ টাকা মণ। গতবারের চেয়ে এবার পাটের আমদানি কম। দাম গতবারের থেকে বেশি। তারা পাট কিনে রাখছেন। মিল খুললে সেখানে পাঠাবেন বলে জানান।

রাজবাড়ী পাট বাজারের পিয়াল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ফরিদুজ্জামান জানান, ভালো মানের পাট তারা তিন হাজার টাকা মণে কিনছেন।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি রাজবাড়ী জেলার মাঠ পর্যায়ে গিয়ে পাটের উৎপাদন পর্যবেক্ষণ করেছেন। প্রথম দিকে খড়ার কারণে পাটের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দে পাটের ফলন কম হয়েছে। বালিয়াকান্দি, পাংশা, কালুখালীতে পাট ভালো হয়েছে। গড় ফলন কাঙ্ক্ষিত ফলনের কাছাকাছি। তবে একটু কম আছে। পাট জাগ দেওয়াও সমস্যা ছিল। কালো পানিতে পাট জাগ দেওয়ার কারণে পাট কালো হয়ে গেছে। ওই পাট বাজারে একটু কম দামে বিক্রি হচ্ছে। ভালো পাট ২৮শ থেকে তিন হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। ২৫শ থেকে ২৮শ টাকা মণ বিক্রি করলে কৃষকের আর্থিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এবছর পাট উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তার চেয়ে কম হয়েছে। কারণ কিছু কৃষক আগ্রহ হারিয়েছে। ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের পরিবর্তে আউশ চাষ করেছে কৃষক। বৃষ্টি পর্যাপ্ত না হওয়ায় জাগ দেওয়ার জায়গা না পাওয়ায় কৃষকরা পাটচাষে আগ্রহ হারাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। আগামী বছর যাতে পাট চাষে আগ্রহী হয় এজন্য তারা সচেষ্ট হবেন।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় ৪৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আবাদ হয়েছে ৪৬ হাজার ১৫৮ হেক্টর জমিতে। মোট উৎপাদন হওয়ার কথা ১ লাখ ১ হাজার ৫৪৭ টন পাট।

/টিপু/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়