বিএনপি নেতা আহমেদ আযমের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খানের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। এক শিল্পপতি থানায় চাঁদা দাবির লিখিত অভিযোগ করেছেন। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ার জের ধরে ওই শিল্পপতির টাঙ্গাইল শহরের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়েছে বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

চাঁদা দাবির অভিযোগ আনা ওই শিল্পপতির নাম মনির আহমেদ মনা। তিনি এশিয়াটিক কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। টাঙ্গাইল শহরের পূর্ব আদালতপাড়ার অধিবাসী ওই শিল্পপতির ঢাকা, গাজীপুর ও টঙ্গীতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মনির আহমেদ টাঙ্গাইল শহরের পূর্ব আদালত পাড়ায় তার বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ আনেন। এর আগে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে তিনি টাঙ্গাইল সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।

এ দিকে টাঙ্গাইল জেলা, সদর উপজেলা ও শহর বিএনপির নেতারা টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, আহমেদ আযম খানের ভাবমুর্তি নষ্ট করার জন্য তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে শিল্পপতি মনির আহমেদ এ অভিযোগ এনেছেন। এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন।

সংবাদ সম্মেলনে মনির আহমেদ জানান, গত মঙ্গলবার তিনি তার বাসভবনে কয়েকজন স্বজনকে দুপুরের খাবারের আমন্ত্রণ করেন। তাদের মধ্যে তার আত্মীয় সখীপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শেখ হাবিবসহ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন ছিলেন। দুপুরে আড়াইটার দিকে আহমেদ খানের অনুসারী ২০-২৫ জন নেতাকর্মী তার বাসায় প্রবেশ করেন। তারা ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় গালাগালি ও ভাঙচুর করেন। তার আমন্ত্রণে মধ্যাহ্ন ভোজে যোগ দিতে আসা ব্যক্তিদের কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে লাঞ্চিত করেন। 

মনির আহমেদ আরও অভিযোগ করেন, এ ঘটনার তিন-চার দিন আগে এক লোক তার কাছে এসে আহমেদ আযমকে ফোনে ধরিয়ে দেন। তখন আহমেদ আযম তাকে জানান, আগামীতে টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসন থেকে তিনি (আযম) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন। তাই ৫০ লাখ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে সেদিন দেখে নেয়ার হুমকি দেন আহমেদ আযম খান।

মনির আহমেদ জানান, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিতে তিনি নিজে টাঙ্গাইল সদর থানায় গিয়ে তার বাসায় হামলা ও চাঁদা দাবির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে আহমেদ আযম খান, টাঙ্গাইল শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ইজাজুল হক ওরফে সবুজসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করেছেন।

টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লোকমান হোসেন লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ দিকে আহমেদ আযম খানসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনার প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি নেতারা। তারা অভিযোগ করেন, শিল্পপতি মনির আহমেদ একজন দুর্নীতিবাজ ও আওয়ামী দোসর। তিনি নিজে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে তার বাসায় সভা করছিলেন। তার বাসায় গিয়ে খারাপ আচরণ করা হয়নি বা ভাঙচুর করা হয়নি। চাঁদাদাবির তো প্রশ্নই আসে না। 

তারা জানান, আহমেদ আযম খান একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। তার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা দুঃখজনক। এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কিছু দলীয় নেতাকর্মী এবং বহিষ্কৃত নেতাকর্মী জড়িত রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা জানান।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামীল শাহীন, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল, শহর বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক ইজাজুল হক সবুজ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজগর আলী, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব তৌহিদুল ইসলাম বাবু, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ও সাদেকুল আলম, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবুল কাশেম, সাবেক প্রচার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।