ঢাকা     সোমবার   ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ, স্যালাইন এবং ওষুধের সংকট

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪২, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪  
লক্ষ্মীপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ, স্যালাইন এবং ওষুধের সংকট

বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে লক্ষ্মীপুরে। ফলে এই জেলার পাঁচ উপজেলায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। বিশেষ করে ডায়রিয়ায় আক্রন্ত হয়ে আশ্রয়কেন্দ্র এবং ঘরবাড়িতে অবস্থান করা মানুষরা ইতোমধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হতে শুরু করেছেন। সেখানে শয্যা সংকটের কারণে মেঝেতে থেকে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন অনেকেই। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। 

এদিকে, লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কলেরা স্যালাইন, সিরাপ সালফুটামল, হিসটাসিন ও ডায়রিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে তাই হাসপাতালের বাইরের ফার্মেসি থেকে স্যালাইনসহ অন্য ওষুধ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীর স্বজনরা। 

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে তিল ফেলার জায়গা নেই। এক একটি বেডে গাদাগাদি করে ২-৩ জন করে রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেক রোগীই বেডে জায়গা না পাওয়ায় মেঝেতেই বিছানা পেতে সারিবদ্ধভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগী ও তাদের স্বজনদের ভিড় ঠেলে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে দেখা গেছে চিকিৎসকদের। 

ডায়রিয়ার ওয়ার্ডের ব্রাদার নোমান হোসেন বলেন, ‘১০ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বর্তমানে ভর্তি আছেন ৯৫ জন রোগী। এক-দুই জন নার্স দিয়ে এতো রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা খুবই কষ্টকর। একজনের স্যালাইন লাগাতে গেলে- দশ জন ডাকে ওষধ দিতে। তার ওপরে স্যালাইন ও ডায়রিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের সংকট রয়েছে। রোগীর স্বজনরা বাইরে থেকে ওষুধ আনলে তা দিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে নিচ্ছি।’ 

দুই দিন ধরে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে একই বেড ভাগ করে আরো দুই রোগীর সঙ্গে  ৭ মাস বয়সী শিশু মিরাজকে নিয়ে  আছেন মান্দারি ইউনিয়নের বাসিন্দা তাসলিমা আক্তার। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ‘গত ১০দিন ধরে বাড়িতে কোমড় সমান পানিতে বন্দি ছিলাম। টয়লেট ও ডোবার নোংরা ময়লা পানিতে বাড়ি একাকার। এখন আমার ৭ মাসের ছেলের জ্বর ও ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। ওর অবস্থা খুব খারাপ। সরকারি হাসপাতেল এসে আরো বিপদে পড়েছি। গুদাম ঘরের মতো এখানকার পরিস্থিতি।’

লক্ষ্মীপুর শহরের মুক্তিগঞ্জ থেকে শিশু তাসুকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসা দিনমুজুর খোকন বলেন, ‘বন্যার পানির কারণে চারদিকে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন অসুখ দেখা দিয়েছে। আমার ১০ বছরের মেয়ের ডায়রিয়া হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েও স্যালাইনসহ সব ওষুধ বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনতে হচ্ছে। কিছু বললে নার্সরা বলেন, ওষুধ নেই, কেথা থেকে দেবো?’

হাসপাতালের ডায়রিয়া বিভাগের ইনচার্জ লিলু রানী দাস বলেন, ‘যারা ভর্তি হচ্ছেন তার সবই বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। গত শুক্রবার ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৩২ জন ভর্তি হলেও গত তিন দিনে গণহারে ডায়রিয়া, জ্বর নিয়ে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। বেড তো খালি নেই। মেঝেতেও হাঁটার জায়গা নেই। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন, সিরাপ সালফুটামল, হিসটাসিন ও ডায়রিয়ার অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্য ওষুধের তীব্র সংকট রয়েছে। যেটুুকু ছিলো সব রোগীদের মধ্যে সমানভাবে বন্টন করা হচ্ছে। রোগীরা এখন বাইরে থেকে ওষুধ কনছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’

লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন আহমদ কবির বলেন, ‘বন্যার কারণে ডায়রিয়াসহ চারদিকে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে শুরু থেকে আশ্রয়ণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় ৬৪টি মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। হাসপাতালগুলোতে রোগী বাড়ায় কলেরার স্যালাইনসহ ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। বিষয়টি  ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দুই-তিন দিনের মধ্য স্যালাইনসহ ওষুধ সরবরাহ করা হলে সংকট নিরসন সম্ভব হবে।’

জাহাঙ্গীর/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়