ঢাকা     সোমবার   ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১ ১৪৩১

নোয়াখালীতে বন্যায় বিভিন্ন খাতে বিপুল লোকসানের আশঙ্কা

নোয়াখালী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৭, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১০:২৭, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
নোয়াখালীতে বন্যায় বিভিন্ন খাতে বিপুল লোকসানের আশঙ্কা

নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির সাথে সাথে দেখা দিয়েছে নানা ক্ষত চিহ্ন, সংকট ও সমস্যা। লোকসানে পড়ার আশঙ্কায় কৃষি, মৎস্য, প্রাণী সম্পদ ও গ্রামীণ সড়কসহ ব্রিজ-কালভার্ট। টিউবওয়েল বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। যার ফলে ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া। এছাড়া বন্যায় চর্মরোগসহ বাড়ছে পানিবাহিত রোগ। 

জেলা শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত পাড়া, শহরের বিভিন্ন অলি-গলিসহ নিচু এলাকার রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার মাঠসহ অনেক জায়গায় এখনো পানি রয়েছে। জেলার সচেতন মহল বলছে, নোয়াখালীর অন্যান্য সমতল জেলা থেকে নিচু। প্রতিবছর বর্ষায় নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। কিন্তু এবার ভয়াবহ বন্যায় নোয়াখালী জেলা শহরসহ জেলার আটটি উপজেলা বন্যা দেখা দেয়। 

জেলা প্রশাসন সূত্র মতে, বন্যার কবলে পড়ায় নোয়াখালীতে বিভিন্ন খাত মিলে এ পর্যন্ত প্রায় চার হাজার একশত পঁচাশি কোটি টাকার মতো লোকসান পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে বন্যা পুরোপুরি সেরে গেলে এ লোকসান আরো বাড়তে পারে। যা জেলার অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তে পারে। 

অন্যদিকে, বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোতে পানি কমলেও দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় দুর্গম এলাকাগুলোর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না।

এছাড়াও জেলায় বেড়েছে ডায়রিয়া ও সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ২০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশত মতো ডায়রিয়া রোগী। এ পর্যন্ত এই হাসপাতালে ডায়রিয়ায় চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় দুই হাজারের মতো । মারা গেছে চার জন। এছাড়া সাপের কামড়ের চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় সাড়ে তিনশত।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজহারুল ইসলাম জানান, নোয়াখালীতে এ পর্যন্ত তিন হাজার কিলোমিটার রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রকৃত তথ্য জানা যাবে। তবে জেলার গ্রামীণ সড়ক খাতে বিশাল একটা ধাক্কা আসতে পারে। 

সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী সৌম্য তালুকদার জানান, বন্যায় নোয়াখালী জেলা সড়ক বিভাগের ১২৩ কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। এ পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। 

নোয়াখালী কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মীরা রানী দাস জানান, জেলাতে ৩৮ হাজার ৪৫৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৬৪৩ কোটি টাকার লোকসান দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে রোপা আমন ২৫ হাজার ৬০১ হেক্টর, আমন বীজতলা ৪ হাজার ৫৩৬ হেক্টর, আউশ চার হাজার ৫২১ হেক্টর, শরৎকালীন সবজি তিন হাজার ২১৬ হেক্টর, ফল বাগান ৪৩৭ হেক্টর, পানের বরজ ৫৭ হেক্টর, আখ ১৩ হেক্টর, আদা ২০ হেক্টর ও হলুদ ৫৫ হেক্টর ক্ষতি হয়েছে। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন জানান, জেলায় ৮৫ হাজার ৩৭৯ মাছের ঘের, পুকুর ভেসে গেছে। মোট ৬ কোটি ১৬ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেক শিক্ষিত যুবক-তরুণ, মধ্যবিত্ত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের সূত্র মতে, জেলাতে প্রায় দুই লাখের মতো পশু মারা গেছে। এর মধ্যে গরু, ছাগল, মুরগী, হাঁসসহ বিভিন্ন প্রাণী রয়েছে। জেলাতে প্রায় ১০৮টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ভয়াবহ বন্যায় জেলাতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন খাত মিলে প্রায় চার হাজার একশত পঁচাশী কোটি টাকার মতো। এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া খুব সহজে সম্ভব হবে না। তবে আমরা পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরুর কাজ করছি। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় অনেক দেশী-বিদেশী এনজিও, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করবে। সবার যৌথ প্রচেষ্টায় নোয়াখালী আবার ঘুরে দাঁড়াবে। বন্যা যে ভাবে মোকাবেলা করেছি, আমরা সবাই মিলে আবার বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনও মোকাবেলা করবো।

সুজন/ইমন


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়