ঢাকা     বুধবার   ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৩ ১৪৩১

গাইবান্ধায় যৌথবাহিনীর অভিযান

মারা যাওয়া দুইজনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা 

গাইবান্ধা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৮, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪  
মারা যাওয়া দুইজনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা 

গাইবান্ধায় যৌথবাহিনীর অভিযানে সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন সুইটসহ আটক ৫ জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। আটকদের মধ্যে মঙ্গলবার দুইজন মারা যান। মামলায় নিহত এই দুইজনের নামও রয়েছে। 

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  
(প্রশাসন ও অর্থ) ইবনে মিজান।

জানা গেছে, মঙ্গলবার সাঘাটা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক কুমার রায় বাদী হয়ে এই মামলা করেন।

মামলার আসামিরা হলেন, নিহত দুই ব্যক্তি সাঘাটা ইউনিয়নের গোবিন্দী গ্রামের সোহরাব হোসেন ওরফে আপেল (৩৫) ও শফিকুল ইসলাম (৪৫) এবং চিকিৎসাধীন সাঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ওরফে সুইট (৫৫), একই ইউনিয়নের বাঁশহাটা গ্রামের শাহাদত হোসেন (৪৫) ও উত্তর সাতালিয়া গ্রামের রিয়াজুল ইসলাম (২৮)। রিয়াজুল চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের গাড়িচালক।

মামলার বাদী এসআই দীপক কুমার রায় বলেন, মারা যাওয়ার আগেই গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে আটক পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এরপর তাদের মৃত্যু হয়। চূড়ান্ত প্রতিবেদনের সময় তাদের নাম অন্তর্ভূক্তির বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে।

গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ইবনে মিজান বুধবার রাতে বলেন, মৃত ওই দুই ব্যক্তির নাম পরবর্তী সময়ে আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। 

অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে আটকের পর তাদের কাছে থেকে দেশিয় অস্ত্রসহ ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধার করা হয়। এরপর তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য স্থানীয় সাঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দুইজন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের একজনকে বগুড়া এবং অন্যজনকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। অসুস্থতার কারণে পরবর্তীতে তাদের মৃত্যু হয়েছে। নির্যাতনে মৃত্যুর বিষয়টি সঠিক নয়। 

এদিকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাহাদত হোসেন পলাশকে (৪৫) রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপর আহত দুইজনের মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে এবং রিয়াজুল ইসলাম (২৮) বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।  

চেয়ারম্যানের ভাতিজা সোহরাব হোসেন আপেলের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোহাম্মদ আসিফ বলেন, সোহরাব হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে মঙ্গলবার সকালে ভর্তি করা হয়। সেসময় তার পায়ে কিছুটা আঘাতের চিহ্ন ছিলো। শুধু এই আঘাতের কারণে তার মৃত্যু হওয়া সম্ভব নয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

বুধবার দুপুরে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে মারা যাওয়া সোহরাব হোসেনের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলেও তিনি জানান। 

এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার বিকেলে সোহরাবের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সন্ধ্যার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এ ছাড়া বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শফিকুল ইসলামের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। 

উল্লেখ্য, সোমবার রাত ১২টার দিকে সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সুইটের বাড়িতে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী। অভিযানে আটকের সময় তাদের কাছে থেকে দেশিয় অস্ত্রসহ ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধার করা হয়। এরপর তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য স্থানীয় সাঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে দুজন অসুস্থ হয়ে পড়লে শফিকুল ইসলামকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং অন্যজনকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তাদের মৃত্যু হয়। অভিযান চলাকালীন সময়ে নির্যাতনের কারণে আটক দুজন মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেন নিহতের স্বজনেরা। তবে পুলিশের দাবি, অভিযানের সময় অসুস্থতাজনিত কারণে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

মাসুম/টিপু


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়