ঢাকা     সোমবার   ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১৬ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে বন্যায় আবাসিক খাতে ব্যয় মেটাতে লাগবে ১২৬ কোটি টাকা

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ০৯:২২, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
লক্ষ্মীপুরে বন্যায় আবাসিক খাতে ব্যয় মেটাতে লাগবে ১২৬ কোটি টাকা

লক্ষ্মীপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে ১৮ হাজার ঘরবাড়ি। এসব ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের বাসিন্দারা নিম্ন আয়ের মানুষ। জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যালয় বলছে, জেলায় বন্যায় আবাসিক খাতে ক্ষয়ক্ষতি মেটাতে ব্যয় হতে পারে প্রায় ১২৬ কোটি ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। 

ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৮ হাজার ৩৬৫টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় সাড়ে ৭ হাজার বসতঘর, রায়পুরে ১ হাজার ৩০৮, রামগঞ্জে ১ হাজার ৮৮৫, রামগতিতে ১ হাজার ২৯২ ও কমলনগরে ৬ হাজার ৩৮০ বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘরগুলো মেরামতের জন্য প্রায় ১২৬ কোটি ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় হতে পারে। তারমধ্যে সদরের ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো মেরামতে ৬২ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, রায়পুরে ২ কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা, রামগঞ্জে ১৯ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, রামগতিতে ৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ও কমলনগরে ৩৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ের সম্ভাবনা আছে।

 

এদিকে বন্যার্ত এলাকার অধিকাংশ মানুষই কৃষিজীবী ও দিনমজুর। এ বন্যায় উপার্জন বন্ধ হয়ে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘরগুলো মেরামত নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। ঘর মেরামতে সরকারিভাবে এখনো কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি। সরকারের উপদেষ্টা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা লক্ষ্মীপুরে এসে পুনর্বাসনের ব্যবস্থার আশ্বাসসহ নতুন ঘর নির্মাণ করে দেবে বলে জানিয়েছেন। 

তবে তারা বলছেন, সরকারি সহায়তা না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো মেরামত অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি সহায়তা দাবি করছে সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম দিঘলী গ্রামের মমিন উল্যার ঘরে হাঁটু পানি ছিল। প্রায় দুই সপ্তাহের মতো ঘরের ভিটা তলিয়ে ছিল পানিতে। এখন পানি ঘর থেকে নেমেছে। তবে দেখা দিয়েছে ক্ষতচিহ্ন। মমিন উল্যার ঘরের ভিটা দেখলে মনে হবে চাষকৃত কোনো ফসলি জমি। অবস্থা এমন হয়েছে যে- ঘরে পা দেওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ঘরের বেড়া এবং খুঁটি এখন নড়বড়ে হয়ে আছে। ভেঙে পড়ে কিনা- সে ভয় তো আছেই। ঘরের আসবাবপত্র পানিতে পচেও নষ্ট হয়েছে।

মমিন উল্যা পেশায় একজন কৃষক। বন্যায় কৃষিও শেষ। আয় রোজগার নেই। তাই ঘর মেরামত করারও অর্থ নেই তার। মমিন উল্যা বলেন, বন্যার পানি উঠা শুরু হলে শুরুতে ঘরে থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু পানি বাড়তে বাড়তে খাটের উপরও উঠে গেছে। তখন কিন্তু অবস্থা বেগতিক হওয়ায় ঘরে থাকতে পারিনি। অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে উঠেছি পাশের বেড়িবাঁধের উপর। সেখানে ঝুপড়ি ঘরে ছিলাম। এখন ঘর থেকে পানি নেমেছে। ঘরের টানে স্ত্রী জরাজীর্ণ ঘরে চলে আসে। কিন্তু ঘরের যে অবস্থা থাকার মতো পরিবেশ নেই। শুধু খাটের উপর বসে থাকা ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না।

মমিন উল্যাদের বাড়ির আশেপাশে বহু কাঁচাঘর পানির নীচে তলিয়ে থেকে নষ্ট হয়েছে। এখনো অনেকের ঘরে হাঁটু পানি, কারো ঘরে কিছুটা কম। যেসব ঘরের পানি নেমেছে, সেগুলো বসবাসের উপযোগী নয়। ঘরের ভিটার মাটি নরম হয়ে আছে। ঘরের নীচের অংশের কাঠ পচে গেছে। ঘরের ভেতরে থাকা আসবাবপত্রও নষ্ট হয়েছে অনেকের।

স্থানীয় বাসিন্দা রোকসানা বেগম বলেন, বন্যার পানি খাটের উপর উঠেছে। পানি থেকে তেমন কিছু রক্ষা করতে পারিনি। পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে আমার সবকিছু। ঘরও এখনো পানির নীচে। এ ঘরে সহজে উঠা যাবে না।

জোহরা বেগম নামে এক নারী বলেন, বেড়িবাঁধের পাশে সরকারি জমিতে ঘর করে থাকতাম। ঘরে এখনো পানি। ঘরের অবস্থা একেবারে খারাপ। কিভাবে এ ঘর মেরামত করবো, সে অবস্থা নেই।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা ভাঙাখাঁ ইউনিয়নের জাগিদার বাড়ি এলাকার গৃহবধূ রাবেয়া আক্তার বলেন, আমার ঘরের খুঁটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। ঘরের কোমর পানি ছিল। আশ্রয় কেন্দ্রে আছি। বন্যার পানিতে ঘরের অবস্থা এমন হয়েছে যে- বসবাসের মতো পরিবেশ নেই। মেরামত করা ছাড়া ঘরে উঠা যাবে না। আমার স্বামী দিনমজুর। বন্যা আমাদেরকে দুর্দশাগ্রস্ত করে দিয়েছে। ঘর মেরামত কোনো উপায় আমাদের নেই। ঘরে তো যেতে হবে, আশ্রয় কেন্দ্রে আর কতদিন থাকবো?

জানা গেছে, জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ৫০টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা বন্যাকবলিত হয়। এখনো সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ১২টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা বানের পানিতে ভাসছে। খালবিলগুলো অবৈধভাবে দখল করে রাখার কারণেই পানি সহজেই নামছে না। এতে ২০-২৫ দিন ধরে বন্যারকবলিত হয়ে আছে জেলার বিভিন্ন এলাকা। দীর্ঘ মেয়াদি এ বন্যা মানুষের জন্য বিপদজ্জনক হয়ে উঠেছে। পানিতে নিমজ্জিত থাকা কাঁচা-পাকা ও আধাপাকা বসতঘরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরের ভিটার মাটি ধুয়ে চলে গেছে। মাটির ঘরগুলোর ভিটা কাদায় পরিণত হয়েছে। কাঠ ও টিনের তৈরি বেড়াগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। কাঠে খুঁটিগুলো পচে গেছে। জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে অসংখ্য বসতঘর।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়েছি।

জাহাঙ্গীর/ইমন


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়