কুমিল্লায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে, আতঙ্ক ছড়াচ্ছে জনমনে
|| রাইজিংবিডি.কম
সকালে ঘুম থেকে উঠেই পুরো শরীরে ব্যথা অনুভব করেন কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন। স্বাভাবিক ব্যথা ভেবে নাপা খেয়েছিলেন। কিন্তু, সকাল গড়িয়ে দুপুর হতেই অনুভব করেন তার জ্বর আসছে। থার্মোমিটারে মেপে দেখলেন ১০৩ ডিগ্রী। পাশাপাশি ব্যথায় কাতরাতে শুরু করেন। পরদিন, নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারলেন তার ডেঙ্গু পজিটিভ। ভর্তি হলেন সেখানেই। অতঃপর, প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক বাড়তে থাকে বোরহানের মনে।
শুধু বোরহানই নয়, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও কুমিল্লা সদর হাসপাতালে প্রতিদিনই এমন আতঙ্ক নিয়ে রাত কাটাচ্ছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা। মশারীর ভেতর বসে সুস্থ হওয়ার আসায় দিন গুনছেন, কবে ফিরবেন বাড়ি, রয়েছেন সেই অপেক্ষায়।
এদিকে, কুমিল্লায় হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। জেলা শহরে একাধিক স্থানে মিলেছে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উপস্থিতি। এ অবস্থায় জেলা জুড়ে ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষত শিশুদের নিয়ে আতঙ্কে আছেন অভিভাবকরা।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৬ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ রাজধানী ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন বলেও জানা গেছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, বন্যার কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরো বাড়তে পারে। সচেতন না হলে মহামারী আকার ধারণ করতে পারে। এছাড়াও, গত আগস্ট মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশী বলে জানা গেছে। আগস্টে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছিলো ৭৬ জন, সেপ্টেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে তা হলো ৭৫ জন। তাদের মধ্যে ৪৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেও ২৪ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। যদিও জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত কারো মৃত্যু হয়নি।
এদিকে, গত বছরের তুলনায় এই বছর জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের হার কম বলে জানিয়েছে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. নিশাত সুলতানা। তিনি বলেন, গত বছর এই সময়ে আমরা হাসপাতালে রোগীর জায়গা দিতে হিমশিম খেয়েছি, এই বছর সেটা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি একটু সচেতন হই এবং এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংস করি তবে দ্রুতই ডেঙ্গুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। মশার লার্ভা সাধারণত স্থায়ী পানিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও বাসার বারান্দায় রাখা গাছের টব, প্লাস্টিকের ব্যাগ, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা, প্লাস্টিকের বোতল, গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ারে পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি রয়েছেন ১৬ জন। তাদের সবাই প্রাপ্ত বয়স্ক। এদের মধ্যে, সাকিব হোসেন নামে এক রোগী বলেন, ‘ঢাকায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে এসেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছি। প্লাটিলেট দেড় লাখ থাকার কথা, আমার রয়েছে ৮০ হাজার। খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে।
কুমিল্লা জেলার সিভিল সার্জন ডা. নাসিমা আকতার বলেন, ‘জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে, হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড রাখা হয়েছে ও চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও, সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
রুবেল/ইমন