ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৪ ১৪৩১

ভূমি অফিসে দুর্নীতি

‘বাড়তি টাকা না দিলে হয়রানি পোহাতেই হবে’

কাওছার আহমেদ, টাঙ্গাইল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১২:৩৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
‘বাড়তি টাকা না দিলে হয়রানি পোহাতেই হবে’

টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দালালের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। দালাল ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে কোনো কাজ হয় না, এমনকি ফাইলও নড়ে না। এতে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের হয়রানি পোহাতে হতে হয়। গুনতে হয় বাড়তি ঘুষের টাকা।

জেলার উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে সম্প্রতি এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন সেবাগ্রহীতা। তারা জানান, নামজারির জন্য ১১৭০ টাকা সরকার নির্ধারিত ফি হলেও দালালের মাধ্যমে ৭-৮ হাজার টাকা দিয়ে করতে হয়। দালাল ছাড়া আবেদন করলে বছরের পর বছর ঘুরলেও কাজ হয় না।

অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে চলতি সপ্তাহের দুই দিন টাঙ্গাইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসে যান এই প্রতিবেদক। দুই দিনই ভূমি অফিসে দালালদের ঘোরাঘুরি করতে দেখেন তিনি। এ সময় দালালরা সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় মাইন নামে এক দালালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জমি ৬ শতাংশ হোক বা ২৫ শতাংশ। নামজারি ফি সমান। বাড়তি টাকা খরচ না করলে বছরের পর বছর ঘুরতে হবে। আমাকে সব মিলিয়ে আট হাজার টাকা দিলে ২০-২৮ দিনের মধ্যে নামজারি করে দিতে পারব।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ভূমি অফিসের হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট কাম অ্যাকাউন্ট্যান্ট সুলতান মাহমুদ আমার বন্ধু। তার মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করি। যে কারণে আমার কাজে কোনো ভোগান্তি নেই।’

কর্মকর্তারা জানান, নামজারি আবেদনের ২৮ কর্মদিবসের মধ্যে প্রদানের বিধান থাকলেও কাগজপত্রে জটিলতা থাকলে সেক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক কর্মচারী বলেন, ‘ইউনিয়নে কাজ করেন বা উপজেলায়। বাড়তি টাকা না দিলে হয়রানি পোহাতেই হবে। সরকার পরিবর্তন হলেও ভূমি অফিসের পরিবর্তন হয়নি। এখানে টাকা ছাড়া কেউ কাজ করতে চায় না।’

কাগমারা এলাকার আব্দুল লতিফ বলেন, নামজারির জন্য অনলাইনে আবেদন করে দেড় মাস যাবত ঘুরছি। কবে নামজারি হবে জানি না। একই অভিযোগ করেছেন আয়নাপুর থেকে আসা নাজিম নামে এক ব্যক্তি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সেবাগ্রহীতা বলেন, নামজারি আবেদন করার পর দুই মাস ঘুরেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাইনি। পরে ভূমি অফিসের সাইফুল ইসলামের কাছে সাত হাজার টাকা দিয়ে সেবা নিয়েছি।

তবে অভিযোগের বিষয় নাকচ করেছেন সদর উপজেলা ভূমি অফিসের হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট কাম অ্যাকাউন্ট্যান্ট সুলতান মাহমুদ ও সাইফুল ইসলাম। দুজনই জানিয়েছেন, তারা কোনো ঘুষ বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। সেবা নিতে আসা যেকোনো ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার চেষ্টা করেন।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রুহুল আমিন শরিফের সঙ্গে। তিনি বলেন, ১১৭০ টাকা খরচ করে অনলাইনের মাধ্যমে নামজারির আবেদন করতে হয়। কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করে আবেদন মঞ্জুর হতে পারে আবার নামঞ্জুরও হতে পারে।

‘অনলাইনে অনলাইনের মাধ্যমে নামজারি করতে হয়। এজন্য সেবাগ্রহীতার অফিসে আসার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে নোটিশ করলে অ্যাসিল্যান্ডের সঙ্গে সাক্ষাতে আসতে পারেন। অন্য কারো সঙ্গে কথা বলার সুযোগ নেই। এরপরও যদি কেউ যদি দালালের খপ্পরে পড়েন, তাহলে তার দায়ভার ওই সেবাগ্রহীতার। আমি এই অফিসে যোগদানের পর যতগুলো নামজারির আবেদন মঞ্জুর বা নামঞ্জুর করেছি প্রত্যেকটির ব্যাখ্যা আছে।’ - যোগ করেন তিনি।

রুহুল আমিন শরিফ আরও বলেন, ‘কোনো সেবাগ্রহীতা দালাল ধরলে সেটা তার ব্যর্থতা। দালাল নির্মূলের আগে নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। যিনি ঘুষ নেন, তার কাছে সেবাগ্রহীতারা কেন যান? সরাসরি অ্যাসিল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। সাধারণ জিনিস না জানা নাগরিকদের অপরাধ।’

কেআই


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়