ঢাকা     শুক্রবার   ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৫ ১৪৩১

২ লাখ টাকা দাবি ছিল তোফাজ্জলের খুনিদের

ইমরান হোসেন, বরগুনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২৩, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ২২:২৬, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
২ লাখ টাকা দাবি ছিল তোফাজ্জলের খুনিদের

তোফাজ্জলের ভাবি (বাঁয়ে), ডানে তোফাজ্জল

তোফাজ্জলকে ছেড়ে দিতে তাকে হত্যার আগে পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেছিল হত্যাকারীরা। স্বজনদের অভিযোগ, হত্যাকারীরা টাকা না পেয়ে হত্যা করেছে তোফাজ্জলকে। 

এদিকে বাবা-মা ও বড় ভাইয়ের মৃত্যু, পরবর্তীতে প্রেমিকার বিয়ের শোকে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে মোবাইল চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার শিকার তোফাজ্জল হোসেন। 

বরগুনার পাথরঘাটার তালুকের চরদুয়ানি এলাকার তোফাজ্জল হোসেন ২০১১ সালে বাবাকে হারায়, এরপর একে একে মা ও পুলিশ অফিসার একমাত্র বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন।

স্বজন হারানোর শোকের মধ্যে কলেজ জীবনে এক চেয়ারম্যানের মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তোফাজ্জল। মেয়ের পরিবার প্রেমের ঘটনা জানার পর তোফাজ্জলকে মারধর করে। অন্যত্র বিয়ে দেন ওই মেয়ের। এরপর থেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল তোফাজ্জল।

তোফাজ্জলের বড় ভাইয়ের স্ত্রী শরীফা বেগম জানান, বুধবার (১৮ সেপ্টম্বর) রাতে একটি নাম্বার (০১৩১০ ৭৯০ ৩৭২) থেকে তোফাজ্জল ফোন করে তাকে জানায়, চোর বলে কয়েকজন মারধর করেছে তাকে। এর কিছু সময় পর ওই নাম্বার থেকে ফোন করে অপরিচিত একজন যুবক পরিচয় জানতে চায় শরীফা বেগমের। পরিচয় দেয়ার পর ফোন কল কেটে দেয়। 

রাত সাড়ে ১০টার দিকে তোফাজ্জলকে ছেড়ে দিতে (০১৭৪৩ ৭৪৫ ৪২৬) নাম্বার থেকে ফোন করে দুই লাখ টাকা দাবি করেন অপর এক যুবক। সামর্থ্য না থাকায়, টাকা দিতে পারেননি তিনি। এরপর বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে জানতে পারেন তোফাজ্জলকে হত্যা করা হয়েছে। 

এদিকে বাবা-মা ও একমাত্র ভাই হারিয়ে নিঃস্ব তোফাজ্জলের মৃত্যুর খবরে স্বজনরা ভিড় করেছেন তাদের বাড়িতে। স্বজনরা জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলকে চুরির অপবাদ দিয়ে যারা হত্যা করেছে তাদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া উচিৎ।

তোফাজ্জলকে মারধরের নির্মম নির্যাতনের ভিডিও দেখে উপজেলার লোকজন ভিড় জমায় তার বাড়িতে। এ সময় তার প্রতিবেশি শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, ‘তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্য হারানোর পর থেকে পাথরঘাটায় দীর্ঘ দিন ছিলেন। রাস্তায় রাস্তায় হাঁটতেন। কিন্তু কাউকে বিরক্ত করতেন না। মাঝেমধ্যে হোটেলে খাবার চাইতেন, ছেড়া প্যান্ট পরে মাথায় দড়ি পাকিয়ে হাঁটতেন। এমন ভারসাম্যহীন মানুষকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে তারাও মানসিকভাবে অসুস্থ। এরা শুধু নামেমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।’

এ বিষয়ে পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বলেন, ‘শরীফা বেগম থানায় এসেছিলেন। আমি মোবাইল নম্বরগুলো চেক করেছি। দুটি নম্বরই এখন বন্ধ। এই ঘটনায় এখন পর্যন্তগুলো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

২০২০ সাল থেকে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলকে প্রথমে পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাট এলাকায় ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে দেখতে পেয়েছেন তার পরিচিতজনরা। কেউ খাবার দিলে খেতেন, নয়তো না খেয়েই থাকতেন তোফাজ্জল।

ইমরান/সনি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়