ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৯ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের পিকনিকের কথা বলে আদালতে নিয়ে সাক্ষ্য 

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৯:৫৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
শিক্ষার্থীদের পিকনিকের কথা বলে আদালতে নিয়ে সাক্ষ্য 

পাবনার চাটমোহরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পিকনিকের কথা বলে বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে আদালতে একটি মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ালেন প্রধান শিক্ষক।

এমন ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন এলাকাবাসী ও অভিভাবকেরা। পরে সন্ধ্যায় বিদ্যালয় চত্বরে অভিভাবক ও শিক্ষক পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটে।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের পাচুড়িয়া মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটে। 

এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত সোমবার সকালে মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করে সকল ছাত্র ছাত্রীদের তিনটি বাস ভাড়া করে পাবনা শহর অভিমুখে রওনা হন বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকবৃন্দ। ছাত্রছাত্রীদের পাবনা রানা ইকো পার্কে পিকনিকের গন্তব্য থাকলেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে যান পাবনা আদালতে। 

এরপর সেখানে কয়েকজন মেয়ে শিক্ষার্থীকে আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে প্রধান শিক্ষক তার ইচ্ছে মতো বয়ান শিখিয়ে দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিতে বলেন। 

মূলত প্রধান শিক্ষক তার ব্যক্তিগত শত্রুতা বশত জনৈক এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা ইভটিজিং মামলায় সাক্ষ্য প্রদান করান এসব মেয়ে শিক্ষার্থীদের দিয়ে।

দীর্ঘ সময় আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান করায় অনেক শিক্ষার্থী ভয়ে পেয়ে যায় ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। অনেকে ভয় পেয়ে ফোন করে তাদের অভিভাবকদের বিষয়টি জানায়। ঘটনাটি সকল অভিভাবক এবং এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে সবাই ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসার পর অভিভাবক ও শিক্ষক পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। 

শফিকুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়ে এই বিদ্যালয়ে ক্লাস টেনে পড়ে। কয়েকদিন আগে আমার মেয়ে সানজিদা মিম আমাকে বললো- আব্বু আমাদের স্কুল থেকে স্যারেরা পিকনিকে নিয়ে যাবে। এজন্য দুইশ’ টাকা চাঁদাও নিয়েছে আমার কাছ থেকে। আজ দুপুরে ওরা পিকনিকে যাওয়ার পরে জানতে পারলাম হেড মাস্টার ছেলে মেয়েদের পাবনা কোর্টে নিয়ে গেছে। আমি তো বিষয়টি জানার পরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। পিকনিকের কথা বলে কোর্টে কেন নিয়ে গেল আমার মেয়েকে? আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিচার চাই!’

সালমা খাতুন নামের অপর এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়ে এই স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। আমি শুনলাম স্কুলের স্যারেরা আমার মেয়েসহ সকল ছাত্রছাত্রীদের পিকনিকের কথা বলে পাবনা কোর্টে নিয়ে গেছে। কেন এদের কোর্টে নিয়ে গেলো আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।’

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের মেয়েদের ইভটিজিং করার ঘটনায় কয়েকমাস আগে চাটমোহর থানায় আমি একটি অভিযোগ দায়ের করি। বর্তমানে অভিযোগটি পাবনা কোর্টে বিচারাধীন। সেই মামলায় সোমবার ১৫ জন মেয়ের আদালতে সাক্ষ্য প্রদানের তারিখ ধার্য ছিল। পাবনায় মেয়েদের সাক্ষ্য প্রদানের বিষয়টি সকল ছাত্রছাত্রীরা জানার পরে তারাও তাদের সহপাঠীদের সাথে পাবনা কোর্টে যেতে চায়। এজন্য সবাইকে নিয়ে যাই।’

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই দুইশ’ টাকা করে চাঁদা তুলে এদিন তারা পাবনা রানা ইকোপার্কে পিকনিক করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারাই বাস ভাড়া করেছে, তারাই সব আয়োজন করেছে। আমি শুধু পিকনিক স্পটে যাওয়ার আগে কোর্টে কয়েকজন মেয়েকে নিয়ে হাজির হয়ে আদালতে সেই মামলার সাক্ষ্য প্রদান করার ব্যবস্থা করিয়েছি। বিষয়টি আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্যারকে আগেই অবহিত করেছিলাম।’

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মগরেব আলী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে আগেই বলেছিলেন পাবনা কোর্টে একটা সাক্ষ্য প্রদান আছে শিক্ষার্থীদের। তবে পিকনিকের বিষয়টি তিনি আমাকে কিছু বলেননি। কোর্টে সাক্ষ্য প্রদানের কথা বলে সকল শিক্ষার্থীদের কোর্টে নিয়ে যাওয়া কাজটি তিনি মোটেও ঠিক করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহল করা হবে।’

এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেদুয়ানুল হালিম বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। পিকনিকের কথা বলে শিক্ষার্থীদের কোর্টে নিয়ে যাওয়ার কাজটি মোটেই ঠিক হয়নি। পরবর্তীতে আমরা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’

শাহীন/সনি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়