নারায়ণগঞ্জের হাসপাতালে নবজাতক মৃত্যুর অভিযোগ
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার বিকেলে হাসপাতালের লেবার রুমে শিশুটির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মৃত নবজাতকের লাশ নিয়ে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেন স্বজনেররা। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছেন নবজাতকের বাবা লিটন চন্দ্র সাহা।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিকভাবে যতটুকু জানা গেছে, শিশুটি নারীর গর্ভে জন্মের ৫/৬ দিন আগেই মারা গেছে। যে লেবার রুমে বাচ্চা জন্ম হয়েছে, সেখানে অন্য একজনেরও বাচ্চা হয়। সেই বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনেছেন মারা যাওয়া নবজাতকের স্বজনরা।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে মা লিপি রানী সাহার প্রসব ব্যথা অনুভব করেন। স্বজনেররা তাকে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নিয়ে যান। পরবর্তীতে ডা. আনুকা রায়ের বিভাগে চেকাপের পর নার্সদের সঙ্গে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হয় লিপিকে। বিকেল ৪টায় নবজাতকের জন্ম হয়। এসময় শিশুর কান্না শুনতে পান মা। নার্স বাচ্চাকে মায়ের কাছে না দিয়ে নানা অজুহাত দেখাতে থাকে। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাচ্চার বাবাকে ডেকে নিয়ে জানানো হয় তাদের সন্তান ৬/৭ দিন আগে মায়ের গর্ভেই মারা গেছে। নবজাতকের লাশ নিয়ে যেতে স্বজনদের জোর করা হয়, অন্যথায় মরদেহ ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
নবজাতকের মা লিপি সাহা বলেন, ‘বিকেল ৪টার দিকে আমি ছেলেকে জন্ম দেই। নার্সরা বলে এখন না পরে। তারা বাচ্চার বাবারে খুঁজতে থাকে। বাচ্চার বাবা তখন টাকা আনতে বাইরে গেছিলো। আমার সসঙ্গে সপাতালে এক মাসি ছিলো। তারেও রুম থেকে বের করে দিছে। সকাল ৭ টার সময় একজন নার্স আমারে বলছে, আমার বাচ্চা মারা গেছে। ছেলে জন্ম হওয়ার সময় আমি বাচ্চার কান্না নিজে শুনছি। বাচ্চা হওয়ার পর নার্সের কাছে বাচ্চা চাইসি তখনও বলছে আমার বাচ্চা ভালো আছে।’
নবজাতকের বাবা লিটন চন্দ্র সাহা বলেন, “বাচ্চার মায়রে হাসপাতালে আনার পর আমার কাছে টাকা ছিলো না। টাকার ব্যবস্থা করতে নবীগঞ্জে গেছিলাম। সেখান থেকে হাইটা আসতে সাড়ে ৬ টা বাইজা যায়। হাসপাতালে আসার পর ডাক্তার বলে ‘তোমার মরা বাচ্চা হইসে’। আমার যখন জিজ্ঞেস করসি, তখন আমার পরিবার বলছে তারা বাচ্চা জন্মের পর কান্না শুনছে। পরে ডাক্তার ফোন দিয়ে আমারে বলে ‘লাশটা তারাতারি নিয়ে যাও নাইলে ডাস্টবিনে ফালাইয়া দিমু’। পরে আমার থেকে কাগজে সই নিয়ে লাশ দিয়ে দেয়।”
তিনি আরও বলেন, ‘আজ সকালে যে নার্স ডেলিভারি করছে তাকে খুঁজতে আসি। তখন বলা হয়, তোমাদের তো মরা বাচ্চা হইসে, লাশ মর্গে আছে। আমি বলছি, মর্গে কেন থাকবো, আমাগো লাশ তো আমাদের সাথেই আছে। তখন দুই জন নার্স জামা চেঞ্জ কইরা পলাইয়া যাইতে চাইসে। একজনরে ধরছি।’
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের আরএমও (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘নারীর নরমাল ডেলিভারি হয়। তিনি হাসপাতালে আসার ৫ মিনিটের মধ্যেই ডেলিভারি হয়। বাচ্চা আগে থেকে মৃত ছিলো। বিষয়টি সিভিল সার্জেনকে আমরা জানিয়েছি। পরিবারকেও বুঝিয়ে বলেছি। আমরা এটাও বলেছি, যদি সন্দেহ থাকে তাহলে ময়নাতদন্ত করতে। নবজাতকের পরিবার ময়নাতদন্ত করেনি। তারা বুঝতে পেরে লাশ নিয়ে চলে গেছে।’
নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটা অভিযোগ পেয়েছি। থানা থেকে অফিসার পাঠিয়েছিলাম। প্রাথমিকভাবে যতটুকু জানতে পেরেছি যে, বাচ্চা নারীর গর্ভে জন্মের ৫/৬ দিন আগেই মারা গেছে। যে লেবার রুমে বাচ্চা জন্ম হয়েছে সেখানে অন্য একজনেরও বাচ্চা হয়। সেই বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনেছে স্বজনরা। চিকিৎসক বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পরও নবজাতকের পরিবারের সদস্যরা বুঝতে চাচ্ছিলেন না। তারা উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের ঠান্ডা করতে আমার অফিসার বলেছে আপনাদের সন্দেহ থাকলে থানায় অভিযোগ করেন। তখন তারা একটা অভিযোগ করে। সিভিল সার্জেন সকালে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। তিনি আমাকে ঘটনা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন তারা সেখানে গিয়ে তদন্ত করে দেখেছেন, বাচ্চাটা ৫ থেকে ৭ দিন আগেই মারা গেছে। সিভিল সার্জন বলেছেন যদি সন্দেহ থাকে তাহলে পুলিশ বা পরিবারের সদস্য চাইলে বাচ্চার ময়নাতদন্ত করাতে পারে। তাহলে সত্য বের হয়ে আসবে। একই জিনিস সিভিল সার্জেন পরবিারকে বুঝিয়ে বলার পর তারা বুঝতে পেরেছে এবং লাশ নিয়ে চলে গেছে।’
অনিক/মাসুদ