নিখোঁজের ৩ মাস পর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন
কালীগঞ্জ (গাজীপুর) কালীগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম
নিহত ফাতেমা খাতুন শায়লা ও গ্রেপ্তার আসামি আব্দুল মজিদ মিয়া
গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে নিখোঁজ হন ফাতেমা খাতুন শায়লা (২৩) নামে এক গৃহবধূ। নিখোঁজের পাঁচদিন পর কালিয়াকৈর থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়। সেই সূত্র ধরে জিডি করার তিনদিন পর কালীগঞ্জ থানার নাগরী ইউনিয়নের মিরেরটেক এলাকার একটি জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয় অজ্ঞাতনামা এক নারীর গলিত মরদেহ। এ সময় মরদেহের পাশ থেকে পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ওড়না ও জুতা দেখে পরিবারের লোক শনাক্ত করেন এটি নিখোঁজ গৃহবধূ ফাতেমা খাতুন শায়লা।
এরপর চাঞ্চল্যকর অজ্ঞাতনামা হত্যা মামলার মূল রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ। অবশেষে ঘটনার সাথে জড়িত আসামি মো. আব্দুল মজিদ মিয়াকে (৪২) গ্রেপ্তার করা হয় এবং আসামি আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আসামি আব্দুল মজিদ মিয়া জানায়, শায়লাকে চাকুরির প্রলোভনে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে ধর্ষণের ঘটনা জানাজানির ভয়ে তাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে মরদেহ গুম করে। এরপর তিনি সেখান থেকে পালি যান।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে কালীগঞ্জ থানা কর্তৃক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলাউদ্দিন। এর আগে বুধবার (২ অক্টোবর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা মহানগর কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকা থেকে আসামি আব্দুল মজিদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে আব্দুল মজিদ গাজীপুর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে কালীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আনোয়ার হোসেন পিপিএম উপস্থিত ছিলেন।
আব্দুল মজিদ মিয়া পাবনা জেলার আটঘরিয়া থানার রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত আছিম উদ্দিন শেখের ছেলে। তিনি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানা সফিপুর বোর্ডমিল এলাকায় থাকতেন। মজিদ নিহত শায়লার আপন খালু শ্বশুর। অন্যদিকে, নিহত ফাতেমা খাতুন শায়লা পাবনা জেলার ফরিদপুর থানার আগপুঙ্গুলী গ্রামের মো. এবাদ আলীর মেয়ে এবং একই এলাকার মো. রুবেল খন্দকারের স্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছরের ১০ জুলাই রাত ৯টার দিকে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ জানতে পারে উপজেলার মিরেরটেক এলাকার পেট্রোবাংলার ফাঁকা জায়গার অজ্ঞাতনামা এক নারীর গলিত মরদেহ পড়ে আছে। প্রাথমিক সুরতহাল শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ওই মাসের ২ তারিখে কালিয়াকৈর থানা এলাকা থেকে ফাতেমা খাতুন শায়লা নামে এক গৃহবধূ নিখোঁজ হন এবং এ সংক্রান্ত একটি জিডিও ৭ তারিখে কালিয়াকৈর থানায় করা হয়। জিডির সাথে ছবি সংযুক্ত শায়লার ছবি ও নিখোঁজের ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত ভিডিও দেখে মিল পাওয়া যায়। পরে পরিবারের লোকজন উদ্ধারকৃত ছবি, ওড়না ও জুতা দেখে মরদেহটি শায়লার বলে সনাক্ত করেন।
পরে ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মো. শাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৪ জুলাই কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা (১৮) দায়ের করেন। চাঞ্চল্যকর অজ্ঞাতনামা সেই হত্যা মামলার মূল রহস্য উদঘাটন কাজ শুরু করেন কালীগঞ্জ থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন পিপিএম। তদন্ত শেষে ঘটনার সাথে জড়িত আসামি আব্দুল মজিদ মিয়াকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বুধবার (২ অক্টোবর) রাত আড়াইটার দিকে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রফিক/ইমন