নেত্রকোণায় বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে উব্ধাখালি নদী
নেত্রকোণা সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
টানা বৃষ্টিতে নেত্রকোণা জেলার প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ফের বন্যার শঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। জেলার উব্ধাখালি নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। কংস নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার শঙ্কা জাগিয়েছে। ফলে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এর আগে, গত জুন-জুলাই মাসে দুই দফায় নেত্রকোণার সাত উপজেলা বন্যার কবলে পড়েছিল।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান জানান, গত ২৪ ঘন্টায় নেত্রকোণার জারিয়া- জাঞ্জাইল পয়েন্টে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি ও দুর্গাপুরে ১৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টির ফলে জেলার সোমেশ্বরী, উব্ধাখালি, কংস ও ধনু নদের পানি বেড়ে চলেছে।
তিনি আরো জানান, শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকেল ৩টা নাগাদ উব্ধাখালি নদীর পানি বেড়ে কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ দশমিক শূন্য ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রভাহিত হচ্ছে। কংস নদের পানি বেড়ে জারিয়া-জাঞ্জাইল পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নদী দুটির পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চলে ঢুকে পড়তে পারে।
সোমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ দশমিক ৮৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ও হাওরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া ধনু নদের পানি বেড়ে খালিয়াজুরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ দশমিক শূন্য ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কলমাকান্দা উপজেলার পোগলা ইউনিয়নের পাঁচগড়া গ্রামের বাসিন্দা সাহেরা খাতুন বলেন, ‘আমরার এইহানে (এখানে) কাইল থেইক্যা (থেকে) মেলা বৃষ্টি অইতাছে (হচ্ছে)। হারা (সারা) রাইতই বৃষ্টি অইছে। অহনও অইতাছে। উব্ধাখালি নদীর পানি আইজ দুপুরের দিকে আমরা এইহান দিয়োপাড় ঢুবাইয়া ফালাইছে। পানি আয়ন (আসা) আরম্ভ অইয়া গেছে। বাড়ির কাছাকাছি আইয়া পড়ছে। কোন সময় যে বাড়ির ভিতরে ঢুইক্যা পড়ে ঠিকঠিহানা নাই।’
একই উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়নের কনুড়া গ্রামের বাসিন্দা মনতোষ বিশ্বশর্মা বলেন, ‘বৃষ্টি আর নদীর পানি এক তালে বাইড়া চলছে। মনে অইতাছে (হচ্ছে) আইজ রাইত আমরার এলঅকায় (এলাকা) পানি ঢুইক্যা যেইতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে দুই দফায় বন্যা আইছে। যেভাবে বৃষ্টি অইতাছে এর লাইগ্যা ঘর থেইক্যা বাইর অয়ন যাইতাছে না। দুর্ভোগের মধ্যে আছি।’
ভারতের মেঘালয় রাজ্যে সীমান্ত এলাকা গারো পাহাড়ি অঞ্চল দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের খুজিগড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে ছোট পাহাড়ি নদী ডাব্রাস ও নেত্রী প্রবাহিত হয়েছে। উজানের ঢলের পানি আর বৃষ্টিতে গতকাল রাতে নদী দুইটি উপচে পানি খুজিগড়া ও বগাউড়া গ্রামে ঢুকে পড়ে। সেখানের অনেক বাড়িতেও
পানি ঢুকেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
খুজিগড়া গ্রামের সমাজকর্মী অন্তর হাজং বলেন, ‘গতকাল রাতে পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টির পানি আমাদের গ্রামের প্রায় ২৫টি বাড়িতে ঢুকেছে। জহর লাল হাজংয়ের দুটি মাটির ঘর ভেঙে গেছে। বন্যা এখন লেগেই থাকে। কারণ নদীগুলো বালিতে ভরে গেছে। পানি ধরে রাখার ক্ষমতা কমে গেছে নদীগুলোর।’
সোহেল/মাসুদ