ঢাকা     শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২০ ১৪৩১

শেরপুরে বন্যায় ৪ মৃত্যু, নৌযানের অভাবে উদ্ধার কাজ ব্যাহত

শেরপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫১, ৫ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ১৬:০৫, ৫ অক্টোবর ২০২৪
শেরপুরে বন্যায় ৪ মৃত্যু, নৌযানের অভাবে উদ্ধার কাজ ব্যাহত

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের সবকটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ ভেঙে এবং পাড় উপচে প্লাবিত হয়েছে জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতি ও শ্রীবরদী উপজেলার অন্তত ১৬টি ইউনিয়ন। পানিবন্দি অবস্থায় আছেন প্রায় এক লাখ মানুষ। 

নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন  ইদ্রিস আলী, খলিলুর রহমান ও বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের ওমিজা বেগমসহ ৪ জন। নিখোঁজ রয়েছেন একজন। 

এদিকে, সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও  স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। তবে, পানির প্রবল স্রোত আর পর্যাপ্ত নৌযানের অভাবে ব্যহত হচ্ছে উদ্ধার কাজ।

আরো পড়ুন:

আরও পড়ুন: শেরপুরে বন্যায় ২ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ তিন

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর নাকুগাঁও পয়েন্টে পানি ১ সেন্টিমিটার এবং নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির তীব্র স্রোতে অপর পাহাড়ি নদী চেল্লাখালীর ওয়াটার গেজ উঠে যাওয়ায় এখানকার পরিমাপ জানা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও অপর দুটি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্রক্ষপুত্র, মৃগী ও দশানী নদীর। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার রাত থেকে প্লবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন ঘরের চালে, সিলিংয়ে ও মাচায়। নালিতাবাড়ীর ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর ও ঝিনাইগাতীর মহারশির বিভিন্ন স্থানের বাঁধে ব্যাপক ভাঙন হয়েছে। 

আরও পড়ুন: উঁচু জায়গা ও রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন শেরপুরের বন্যাদুর্গতরা

বন্যার পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া গাজিরখামার সড়ক, শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া তিনআনী সড়ক, নালিতাবাড়ী-নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়কসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১০টি সড়ক। বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য গ্রামীণ পাকা ও কাঁচা সড়ক। ভেসে গেছে এসব এলাকার সব পুকুরের মাছ। নষ্ট হয়েছে আমনের খেত। 

স্থানীয়রা আরও জানান, বিভিন্ন স্থানে বানের পানিতে ধসে ও ভেসে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি। পানিতে তলিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কিছু আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও তা অপর্যাপ্ত এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় অনেকে আসতে পারছেন না।

জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ পর্যন্ত জেলার সাড়ে ৩৫ হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। ৯৫০ হেক্টর জমির সবজির আবাদ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। 

শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, এক রাতের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ করে এই বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলাগুলোতে নির্দেশনা দেওয়া আছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র খোলার। উপজেলা প্রশাসনও আগে থেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করে রেখেছে। অনেক স্কুল-কলেজও পানির নিচে। আমরা শুকনো খাবার বন্যা দুর্গত উপজেলাগুলোতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দুর্গত মানুষদের উদ্ধার করা।

আরও পড়ুন: মহারশি নদীর বাঁধে ভাঙন, তলিয়েছে ৪২০০ হেক্টর জমির ধান

শেরপুরে তিন নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

শোভন/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়