ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১১ ১৪৩১

মুখ দিয়ে লিখেই বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার স্বপ্ন জোবায়েরের

আমিরুল ইসলাম, রংপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০২, ৫ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ১৯:২৭, ৫ অক্টোবর ২০২৪
মুখ দিয়ে লিখেই বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার স্বপ্ন জোবায়েরের

প্রতিবন্ধী জোবায়ের

হাত-পা থাকলেও তাতে নেই কোনো শক্তি। স্পষ্টভাবে বলতে পারেন না কথা। প্রতিটি কাজ করতে হয় অন্যের ওপর নির্ভরশীল থেকে। এভাবেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে মুখ দিয়ে লিখেই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছেন জোবায়ের। ডিগ্রি পাস কোর্সে অধ্যায়নরত এই শিক্ষার্থীর এখন ইচ্ছা পড়ালেখা শেষ করে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়া।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালারহাট ইউনিয়নের বড় হযরতপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক জাহিদ সারোয়ার-উম্মে কুলসুমের প্রতিবন্ধী ছেলে জোবায়ের। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বাবা। পরিবারকে একটু সহায়তা করতে ও নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে নিতে ফ্রিল্যান্সিং করতে চান জোবায়ের। বিত্তবানদের কাছে তার চাওয়া একটি ল্যাপটপ ও অ্যান্ড্রয়েড ফোন। 

আরো পড়ুন:

মুখ দিয়ে কলমের সাহায্যে কি-বোর্ড টিপে কম্পিউটার চালাতে পারেন জোবায়ের

জানা গেছে, কৃষক জাহিদ সরোয়ারের তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় জোবারের। তার বড় ছেলে এইচএসসি পাস করে পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে বর্তমানে ঢাকায় পোশাক শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। ছোট মেয়েরও বিয়ে হয়েছে বছর দুয়েক আগে। এখন সংসারে প্রতিবন্ধী ছেলে জোবায়েরকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয় বাবা সারোয়ার ও মা উম্মে কুলসুমকে। 

জোবায়েরের মা উন্মে কুলসুম বলেন, ‘জন্মের পর থেকে নানা রকম শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে বড় হয়েছে জোবায়ের। দুই ভাই-বোন যখন বাসায় পড়ালেখা করতো পাশে বিছানায় শুয়ে সেগুলো শিখে নিতো জোবায়ের। বোন যখন উচ্চস্বরে বই পড়তো তখন তার ভুল ধরতো জোবায়ের। সঠিকটাও বলে দিতো সে অস্পষ্ট উচ্চারণে। এরপরই ছেলের পড়ালেখার বিষয়ে মনোযোগী হন জোবায়েরের বাবা।’

বিছনায় শুয়ে পড়ালেখা করেন জোবায়ের

জোবায়েরের বাবা জাহিদ সারোয়ার বলেন, ‘ছেলের পড়ালেখার আগ্রহ দেখে তাকে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভর্তি করা হয়। বালারহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে আলাদা কক্ষে বসে মুখ দিয়ে লিখে ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেয় জোবায়ের। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সিজিপিএ- ৪.৩৩ পেয়ে পাস করে জোবায়ের। পরে বালারহাট কলেজ থেকে ২০২১ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সিজিপিএ- ৪.৫৮ পেয়ে পাস করে আমার ছেলে।’

পরিবার জানায়, ভর্তি পরীক্ষায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও সুযোগ হয়েছিল জোবায়েরের। অভাবের কারণে সেখানে ভর্তি করানো যায়নি তাকে। বাধ্য হয়ে পরিবার স্থানীয় বালারহাট ডিগ্রি কলেজে পাস কোর্সে ভর্তি করান জোবায়েরকে। এখন জোবায়ের নিজ বিছানাকে শ্রেণিকক্ষ বানিয়ে দিনরাত বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে চলে তার পড়ালেখা। শুধু তাই নয়, মুখ দিয়ে মোবাইল ফোন চালিয়ে অনলাইনেও ক্লাস করেছেন তিনি। 

জোবায়ের অস্পষ্ট মুখের বুলিতে বলেন, ‘আমি কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছি। আশা ছিলো ইঞ্জিনিয়ার হবো। ওই লাইনে পড়তে পারিনি। মাস্টার্স করে বিসিএস ক্যাডার হতে চাই। আমার বাবার কাছে ভালো একটা ল্যাপটপ চেয়ে আসছি, তিনি দিতে পারছেন না। ভালো একটি মোবাইল ও ল্যাপটপ হলে অনলাইনে আয় করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে নিতে পারবো।’ 

একা কিছু করতে পারেন না জোবায়ের। বাবা-মায়ের সাহায্যে সবকিছু করেন তিনি

মিঠাপুকুর বালারহাট ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আতোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও পড়ালেখায় জোবায়ের যে ফল বয়ে এনেছেন, তা সাধারণ শিক্ষার্থীদের চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে। পরিপূর্ণ সাপোর্ট পেলে প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে জোবায়ের একদিন সফলতার শীর্ষে পৌঁছাবে। তার সাফল্য আলোচিত হবে সবার মুখে মুখে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে জোবায়েরের বিষয়ে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।’

বালারহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে জোবায়েরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তার যে  চাহিদা সে অনুযায়ী তার পাশে দাঁড়ানোর কোনো তহবিল বর্তমানে পরিষদে নেই।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়