ঢাকা     শনিবার   ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১ ১৪৩১

ময়মনসিংহে বন্যা

ভারত সীমান্তবর্তী ৫০ গ্রাম প্লাবিত, আশ্রয়কেন্দ্রে ৭ শতাধিক মানুষ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ৫ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ২১:৩৩, ৫ অক্টোবর ২০২৪
ভারত সীমান্তবর্তী ৫০ গ্রাম প্লাবিত, আশ্রয়কেন্দ্রে ৭ শতাধিক মানুষ

ময়মনসিংহের ভারত সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি গ্রাম অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলের খেত, মাছের ঘেরসহ হাজারো বাড়িঘর। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষরা জীবন বাঁচাতে পারিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন। এই দুই উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে প্রশাসন। 

জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন বিভাগ স্থাপিত কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় বিদ্যুৎসংযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। 

শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখন নারী শিশুসহ সাত শতাধিক মানুষ উঠেছেন। তাদের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

আরো পড়ুন:

জানা গেছে, গত দুই দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হালুয়াঘাট সীমান্তবর্তী দর্শা, মেনংছড়া, বোরারঘাট ও সেওলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। গতকাল শুক্রবার রাতেই বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে ও পাড় উপচে প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। ফলে ভূবনকুড়া ইউনিয়নের মহিষলেটি, ধোপাজুড়া, কড়ইতলী, জুগলী ইউনিয়নের গামারীতলা, জিগাতলা, নয়াপাড়া, ছাতুগাও, কৈচাপুর ইউনিয়নের নলুয়া, জয়রামকুড়া এলাকা প্লাবিত হয়। গাজীরভিটা ইউনিয়নের বোরাঘাট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সূর্যপুর, সামিয়ানাপাড়া হাজনিকান্দক, আনচিংগি, বোয়ালমারাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। এছাড়া ভোগাই নদীর বিভিন্ন অংশে বাঁধ উপচে হালুয়াঘাট পৌরশহর, সদর ইউনিয়নসহ হালুয়াঘাট বাজারের বিভিন্ন অংশে পানি প্রবেশ করে।

ভূবনকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়া জানান, গতকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। নদীগুলোতে পানি বাড়ছে। গতকাল দুপুরের দিকে শেওয়াল ও মেনেং নদীর দুইটি অংশে পাড় ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।’

হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবিদুর রহমান বলেন, ‘পানি কিছুটা কমে গিয়েছিল। আজ প্রায় টানা দুই ঘণ্টা বৃষ্টি হওয়ায় পানি আবার বেড়ে গেছে। উপজেলায় চারটি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে নারী-শিশুসহ প্রায় ৭ শতাধিক মানুষ উঠেছেন। শতাধিক গরু-ছাগলও আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘দুর্গতদের জন্য ১০ হাজার ম্যাট্রিকটন খাদ্য সহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে। খাদ্য সহায়তা বিতরণ চলমান আছে।’ 

অপরদিকে, শুক্রবার বিকেলে ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর, জিগাতলা, পঞ্চনন্দপুরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে প্রায় পুরো উপজেলা প্লাবিত হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘোষগাও, দক্ষিণ মাইজপাড়া ও গামারিতলা ইউনিয়ন।

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, ‘উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। বৃষ্টি বাড়লে পানি আরও বাড়তে পারে। উপজেলায় মোট সাতটি ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দুটি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। অনেক এলাকায় এখনো খোঁজখবর নিতে পারিনি। জনপ্রতিনিধিরা নৌকার অভাবে সব এলাকায় পৌঁছাতে পারেনি। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় মোবাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে সঠিক তথ্য এখনো আমরা পাইনি। সঠিক তথ্য পেতে আরও সময় লাগবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘দুর্গতদের জন্য তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হলেও ক্ষতিগ্রস্তরা আশ্রয় নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। বিপর্যস্তরা আশপাশের উঁচু জায়গা ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।’

মিলন/মাসুদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়