কুষ্টিয়ায় ৪ শিশু নিহত
ঘুম চোখে মাইক্রোবাস চালাচ্ছিলেন চালক
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
গ্রেপ্তার মাইক্রোবাস চালক কাবের আলী
কুষ্টিয়ার খোকসায় মাইক্রোবাসের চাপায় চার শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় মাইক্রোবাস চালক কাবের আলীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মেহেরপুরের গাংনী থানার ঈদগাহপাড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার(৯ অক্টোবর) সকাল ১১টায় র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তার মাইক্রোবাস চালক কাবের আলী (২৮) চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানার আমতৈল গ্রামের সারোয়ার উদ্দিনের ছেলে।
আরও পড়ুন: আমার যা হওয়ার হয়ে গেছে: তানজিলা-নুসরাতের বাবা
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে মক্তব থেকে পড়া শেষ করে বাড়ি ফেরার সময় কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক সড়কের শিমুলিয়া এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি মাইক্রোবাস পাঁচ শিশুকে চাপা দিয়ে পাশের পুকুরে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মিম খাতুন (১২) নামে এক শিশু মারা যায়। দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় বাকি চার শিশুকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তানজিলা আক্তার (১৪), মারিয়া খাতুন (১১) ও যুথী খাতুন (৯) মারা যায়। এ ঘটনায় মারাত্মক আহত হয় ফাতেমা খাতুন (৯)। ঘটনার পর থেকে মাইক্রোবাস চালক পলাতক ছিলেন। ঘটনার দিন পুলিশ বাদী হয়ে মাইক্রোবাস চালকের বিরুদ্ধে খোকসা থানায় মামলা করে।
র্যাব-১২ কোম্পানি কমান্ডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান বলেন, পলাতক মাইক্রোবাস চালককে ধরতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। মেহেরপুরের গাংনীতে দুই বার অভিযান চালিয়েও তাকে ধরা সম্ভব হয়নি। তিনি তার বোনের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন।
আরও পড়ুন: মক্তব থেকে ফেরার পথে মাইক্রোবাসের চাপায় ৪ শিশু নিহত
তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার কাবের আলী জানিয়েছেন, তিনি আগের দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে প্রবাস ফেরত একজন যাত্রীকে নিয়ে আলমডাঙ্গায় ফিরছিলেন। গাড়ির গতি ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার। দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর কারণে তিনি ক্লান্ত ছিলেন। ঘুম ঘুম চোখে তিনি গাড়ি চালাচ্ছিল। তিনি জানিয়েছেন, পাঁচ শিশু রাস্তার ডানদিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে তাদের মধ্যে দুই শিশু বামদিকে এসে রাস্তা পার হতে গেলে চালক গাড়িটি আবারো ডানদিকে টার্ন নেয়। তখন শিশুরা আবার বামদিক থেকে ডানদিকে চলে আসলে চাপা পড়ে।’
র্যাব-১২ কমান্ডার আরও বলেন, ‘এমনটা হওয়ার কথা না। তিনি (চালক) সেল্ফ ডিফেন্সের (আত্মরক্ষার) জন্য এমন কথা বলতে পারেন। কারণ শিশুরা রাস্তা পার হলে এক সঙ্গেই পার হওয়ার কথা।’
মোহাম্মদ ইলিয়াস খান বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা চালককে ধরতে সক্ষম হয়েছি। তিনি একজন চালাক প্রকৃতির মানুষ। একই স্থানে তিনবার অভিযানের পর তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। মাইক্রোবাসটির মালিক মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন। তার কাছ থেকে চালকের মুঠোফোন নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গ্রেপ্তার কাবের আলীকে চৌড়হাস হাইওয়ে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত মিমকে ঘটনাস্থল থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা। সপ্তম শ্রেনির ছাত্রী তানজিলা খাতুন ও নুসরাত ইসলাম মারিয়া মারা যান খোকসা ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে। তারা আপন বোন। দুই জনই শিমুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। দুর্ঘটনায় নিহত মিম তাদের আপন চাচাতো বোন। সে পড়ত গ্রামের পূর্বাসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে। হাসপাতালে নিহত জুুঁথি মিমের সহপাঠী ছিল। তাদের সবার বাড়ি শিমুলিয়া কুঠিপাড়ায়। বাড়িও পাশাপাশি। গ্রামের কবরস্থানে পাশাপাশি কবরে তিন পরিবারের চার কন্যা শিশুকে দাফন করা হয়েছে।
কাঞ্চন/মাসুদ