ঢাকা     শনিবার   ১২ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২৭ ১৪৩১

ছুটির দিনে কক্সবাজার সৈকতে মানুষের ঢল 

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৬, ১২ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ১৬:২৮, ১২ অক্টোবর ২০২৪
ছুটির দিনে কক্সবাজার সৈকতে মানুষের ঢল 

দুর্গাপূজার বন্ধসহ টানা চার দিনের সরকারি ছুটি চলছে। এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন ভ্রমণপিপাসু ও বিনোদনপ্রেমী মানুষ। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের ঢল নেমেছে। 

কক্সবাজার শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলে ১০ থেকে ১৩ অক্টোবর সময়ের জন্য ৯০ ভাগের বেশি রুম বুকিং হয়েছে। ১৪ থেকে ১৯ অক্টোবরের জন্য বুকিং হয়েছে ৮০ ভাগের বেশি রুম। পর্যটক টানতে প্রায় প্রতিটি হোটেল রুম ভাড়ায় ৪০-৪৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিচ্ছে। কাল রোববারের মধ্যে শতভাগ কক্ষ বুকিং হবে বলে আশা করছেন হোটেল মালিকরা।

শনিবার (১২ অক্টোবর) সকাল ও দুপুরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার পর্যটক সপরিবারে দল বেঁধে অথবা বন্ধুবান্ধব মিলে ঘোরাঘুরি করছেন। কেউবা নেমেছেন সাগরের নোনা পানিতে গোসল করতে। 

ঢাকার মালিবাগ থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন নতুন দম্পতি শাহ জালাল ও শারফিন। শাহ জালাল বলেন, কক্সবাজারে বার বার আসলেও এবার জীবনসঙ্গীনিকে নিয়ে আসলাম। হোটেলে রুম পেতে অনেক কষ্ট হয়েছে। মানুষের ভিড়ে সমুদ্র সৈকতকে দেখতে মনে হচ্ছে বড় সমাবেশস্থল। মানুষের এই মিলনমেলা দেখাও অন্যরকম অনুভূতি।

কুমিল্লা থেকে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফাহিম সরকার বলন, রুম পাইনি বলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসতে পারিনি। মাত্র দুইটা রুম পেলাম। তাই, আমরা দুই ভাইয়ের পরিবারের সদস্যরা এলাম। ছুটির দিনে কক্সবাজারে অনেক মজা লাগছে। মা-বাবা ও ভাই-বোনরা থাকলে আরো ভালো লাগতো। 

নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা সরওয়ার কামাল বলেন, পর্যটন মৌসুমে খাবার-দাবার কিংবা হোটেলের দাম আমাদের কাছে একটু বেশি মনে হলেও অতিরিক্ত নিচ্ছে না। অতিরিক্ত না নিলেই ভালো। কারণ, সবাই নির্দিষ্ট একটা বাজেট নিয়ে ঘুরতে আসে।

কক্সবাজার শহরসংলগ্ন সৈকত ছাড়াও হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেকসহ শহরের বাইরের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও ছিল হাজার হাজার মানুষের ভিড়। পর্যটন ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, গত ৪ মাসের মধ্যে এ সপ্তাহেই সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকের সমাগম হবে কক্সবাজারে।

হোটেল মালিকরা জানিয়েছেন, গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও কারফিউ জারির কারণে দুই মাস ধরে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে মন্দাচলে। গত মাসের শেষার্ধ থেকে ধীরে ধীরে পর্যটক বাড়তে থাকে। 

সাগরপাড়ের তারকা হোটেল কক্সটুডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু তালেব বলেন, আগামীকাল রোববারের মধ্যে শতভাগ কক্ষ বুকিং হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

একই আশা ব্যক্ত করেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশনের কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার। 

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এ বছর কক্সবাজারে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের ঢল নামবে।

কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দীর্ঘ দুই মাস দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে চরম মন্দাকাল গেছে। তবে, গত মাসের শেষার্ধ থেকে ছুটির দিনে হাজার হাজার পর্যটকের আনাগোনায় আবারও স্বরূপে ফিরেছে কক্সবাজার। 

এদিকে দুর্গাপূজার ছুটিতে কক্সবাজার-ঢাকা রুটে ৭টি বিশেষ ট্রেন চালু হয়েছে। ১০ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত চার দিন এই বিশেষ ট্রেনগুলো চলবে।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে প্রথম বিশেষ ট্রেনটি কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেয়। শুক্রবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ট্রেনটি কক্সবাজার পৌঁছায়। ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে বিশেষ ট্রেনগুলো ছেড়ে যাবে। ট্রেনগুলো রাত ১০টায় ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাবে।

কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা মো. গোলাম রব্বানী জানিয়েছেন, এই রুটে নিয়মিত দুই জোড়া ট্রেনের পাশাপাশি এই বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করা হচ্ছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী বিশেষ ট্রেনের আসন সংখ্যা ৫১৮টি। কক্সবাজার থেকে ঢাকামুখী ট্রেনে আসন ৬৩৪টি। পর্যটকদের জন্য এই বিশেষ ট্রেন সার্ভিস দুর্গাপূজার ছুটিতে কক্সবাজার ভ্রমণের আনন্দকে আরও বাড়াবে বলে মনে করছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

এ রুটে পর্যটক এক্সপ্রেস ও কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামে নিয়মিত দুই জোড়া ট্রেন চলাচল করছে। এর মধ্যে কক্সবাজার এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে যাত্রার সময় আসন সংখ্যা ৭৯৭ এবং ফিরতি পথে আসন ৭৩৭টি। পর্যটক এক্সপ্রেসের ধারণক্ষমতা ৭৮০ জন। 

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সাধারণত, শীতকালীন পর্যটন মৌসুমকে পিক সিজন এবং বর্ষাকালীন সময়কে অফসিজন বা মন্দা মৌসুম হিসাবে ধরা হয়। এরপরও বর্ষাকালে সরকারি ছুটির দিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার এবং অফিস খোলার দিনে ৫ থেকে ১০ হাজার পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন। তবে, প্রতিবছর দুই ঈদ এবং থার্টিফার্স্ট’র ছুটিতে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। এ সময় হোটেল-মোটেলে শতভাগ রুম বুকিং থাকে। বর্তমানে কক্সবাজার শহরের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও কটেজে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুবিধা রয়েছে। এসব হোটেলে প্রায় ২০ হাজার কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন।

সমুদ্রের শহর কক্সবাজারে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সমুদ্র সৈকতসহ জেলার প্রতিটি স্পটে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি রেখেছে প্রশাসন। 

পর্যটকরা নির্বিঘ্নে সমুদ্র সৈকত ছাড়াও দৃষ্টিনন্দন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি পাহাড়-ঝরণা, প্রাকৃতিক গুহার দরিয়ানগর পর্যটনপল্লি, ইনানী ও পাটোয়ারটেক পাথুরে সৈকত, শামলাপুর সৈকত, টেকনাফ সৈকত, জাহাজপুরা গর্জন বাগান, মাথিন কূপ, কুদুমগুহা, রামুর বৌদ্ধপল্লি, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির ও চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক ভ্রমণ করতে পারবেন।

পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, জেলা পুলিশের সমন্বয় করে নিরাপত্তা জোরদার করেছি। এবারের ছুটিতে আমাদের অতিরিক্ত পেট্রোলিং থাকবে। বিশেষ করে টেকনিক্যাল বিষয়, যেমন: ড্রোন, সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। এছাড়া, প্রতিটি স্পটে আমাদের সাদা পোশাকে ট্যুরিস্ট পুলিশ থাকবে।’

তারেকুর/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়