বেরোবির সম্মাননা প্রত্যাখ্যান করলেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম
রংপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
মঞ্চে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সম্মাননা নেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। অবশ্য পরে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত দুই শিক্ষককে সম্মাননা দেওয়ায় প্রধান অতিথির সম্মাননা প্রত্যাখ্যান করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মঞ্চে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি। তাঁর বক্তব্য শেষে এক শিক্ষার্থী জানান, সম্মাননা স্মারক পাওয়া দুই শিক্ষক কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের উসকানিদাতা। বিষয়টি জানতে পেরে নাহিদ ইসলাম ফের মঞ্চে উঠে প্রধান অতিথির সম্মাননা প্রত্যাখ্যান করেন।
ওই দুই শিক্ষক হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কমলেশ রায় ও কলা অনুষদের ডিন শফিক আশরাফ।
এ সময় ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘যারা স্বৈরাচারের দোসরিপনা করেছেন, তাদের সম্মাননা স্মারক দেওয়াটা আমরা মানতে পারি না। যাদের আজ সম্মাননা দেওয়া হলো, তাদের একজন আন্দোলনে হামলাকারীদের উসকানিদাতা স্বৈরাচারের দোসর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কমলেশ রায়। অন্যজন কলা অনুষদের ডিন শফিক আশরাফ শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর পর বিতর্কিত কলাম লিখেছেন। তাদের সম্মাননা দেওয়া মানে আবু সাঈদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা।’
এ সময় আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাঠামোতে এখনও স্বৈরাচারের দোসররা বসে আছেন। তাদের সরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার না করলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাঠে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এরপর ফের মঞ্চে উঠে মাইকে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সম্মাননা স্মারক প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যে অভিযোগ তুলেছেন, আমি তা জানতাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি এসেছেন। ভিসি স্যারের কাছে আমারও আবেদন থাকবে, যেন আপনাদের অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আপনারা অভিযোগ করলেন— এই মঞ্চ থেকে আওয়ামী লীগ ও স্বৈরাচারের দোসর, তাদের স্মারক সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। একই মঞ্চ থেকে আমাকে যে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, এটি আমি গ্রহণ করছি না। হয়ত কোনো একদিন ফ্যাসিবাদমুক্ত বেরোবিতে আসব এবং আপনাদের সব দাবিদাওয়া পূরণের সক্ষমতা নিয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়াব। সেদিনই হয়ত প্রকৃত সম্মাননা গ্রহণ করব। সবাইকে ধন্যবাদ।’
তাৎক্ষণিক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের এমন বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের উল্লাস করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শওকত আলী বলেন, ‘দিনব্যাপী আয়োজন ভালো ছিল। আমাদের আজকের এই আয়োজন পরিপূর্ণ করেছেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের উপস্থিতি। তবে আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সম্মাননা স্মারক নিয়ে ছাত্ররা অভিযোগ তুলেছিল, একই মঞ্চে বঙ্গবন্ধু পরিষদের এক শিক্ষক ও আবু সাঈদের নিহতের বিষয় নিয়ে কলাম লেখা আরেক শিক্ষক সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেছেন। যেহেতু তারা ডিন, তাই তাদের নাম এই তালিকায় ছিল। বঙ্গবন্ধু পরিষদের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি আমি জানতাম না এবং আমাকে জানানো হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে এমন হয়েছিল। ফলে অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা মহোদয় ক্রেস্ট নেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি, ১৫ বছরের সব বৈষম্য অতিদ্রুত নিরসন করতে কাজ করা হবে।’
আমিরুল/বকুল