প্রতিমার সোনার মুকুট চুরি: মামলা দায়ের, আটক ৪

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুরে যশোরেশ্বরী মন্দিরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া প্রতিমার মাথার সোনার মুকুট চুরির ঘটনায় শ্যামনগর থানায় মামলা হয়েছে। যার মামলা নং-১২/২৯৮। চুরি যাওয়া মুকুটটি এখনও উদ্ধার হয়নি। 

মুকুট চুরি হওয়া মন্দিরের পরিচালনা কমিটির পক্ষে জ্যোতি প্রকাশ চট্রোপাধ্যায় বাদী হয়ে শ্যামনগর থানায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কে। 

শনিবার (১২ আক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টায় সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই আনিছুর রহমান মামলার বিষয় নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় ইতোমধ্যে চারজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের আটক করার চেষ্টা চলছে।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আহম্মেদ কবির জানান, আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্যদের আটক ও মুকুট উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

আটকরা হলেন, শ্যামনগর উপজেলার ইশ্বরীপুর গ্রামের ছিদাম সেরকারের স্ত্রী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী রেখা সরকার (৪৫), একই গ্রামের অখিল চন্দ্র সাহার ছেলে পুরোহিতের সহকারী অপূর্ব সাহা (৪৬), গোকুল চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে সঞ্জয় বিশ্বাস (৩৭) ও শ্রীফলকাটি গ্রামের হরেন বিশ্বাসের স্ত্রী পারুল বিশ্বাস (৪১)।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুর পৌনে ৩টার দিকে এক যুবক মন্দিরে প্রবেশ করে প্রতিমার মাথায় থাকা স্বর্ণের মুকুট খুলে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সিসিটিভির ফুটেছে ধরা পড়েছে। ২০২১ সালের ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যশোরেশ্বরী কালী মন্দির পরিদর্শন করেন। ওই দিন তিনি নিজ হাতে কালী প্রতিমার মাথায় স্বর্ণের মুকুটটি পরিয়ে দেন।

মামলার এজাহারে বাদী জ্যোতি প্রকাশ চট্রোপাধ্যায় উল্লেখ্য করেন, যশোরেশ্বরী মন্দির তীর্থস্থান। ১৮০৯ সাল থেকে তাদের পূর্বপুরুষরা মন্দিরটি পরিচালনা করছেন। গত ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদি মন্দির পরিদর্শনকালে দেবীর মাথায় রুপার ওপর সোনার জলের রং করা মুকুটটি পরিয়ে দেন। প্রায় ৩০ ভরি ওজনের ওই মুকুটের মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা।

মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, পুরোহিত দিলীপ ব্যানার্জীর কাছে মন্দিরের চাবি থাকে। তবে পরিচ্ছন্নতার জন্য মাঝেমধ্যে রেখা রানীকে পুরোহিত চাবি হস্তান্তর করেন। এমন এক অবস্থায় গত ১০ অক্টোবর আগত ভক্তদের সেবা দেওয়ার সময় মন্দিরের তালা খুলে কাজের সময় পরিচ্ছন্নতাকর্মী রেখা অসাবধানতাবশত বাইরে চলে যায়। পরে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা দেবীর মাথা থেকে মুকুট খুলে নিয়ে পালিয়ে যায়।

শ্যামনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফকির তাইজুর রহমান বলেন, মামলার পর বিষয়টি ডিবি তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তারা চারজনকে আটক করেছে। এছাড়া সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজের যুবককে শনাক্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

ঈশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জি এম শোকর আলী বলেন, মুকুট চুরি করা যুবক তাঁদের এলাকার নন। বিভিন্ন এলাকার মানুষকে ভিডিও দেখানো হলেও কেউ চিনতে পারছে না। ওই যুবককে দুই-তিন দিন ধরে অনেকে মন্দিরের আশপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখেছে।

এদিকে, মুকুট চোর ধরিয়ে দিতে পারলে বিশেষ পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম।

ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘যশোরেশ্বরী মন্দিরে মুকুট চোরকে ধ‌রি‌য়ে দিতে বা কোনো সন্ধান বা শনাক্তে সাতক্ষীরা জেলা পু‌লি‌শকে সহায়তার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। পুলিশ সুপার মুকুটের সন্ধানকারীকে বিশেষ পুরস্কারে পুরস্কৃত ক‌রবেন।’