অর্থাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না ফয়সাল
পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান ফয়সাল ইসলাম (২০) নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন মা’কে হারিয়ে হোঁচট খান পড়ালেখায়। তবে অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে দমাতে পারেনি। এসএসসিতে প্রত্যাশিত ফলাফল না পেলেও এইচএসসিতে সন্তোষজনক ফল পেয়েছেন। এখন স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও সে স্বপ্ন যেন তার নাগালের বাইরে, অর্থাভাবে ভর্তি হওয়া প্রায় অনিশ্চিত তার।
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ফয়সাল। মেধা তালিকায় ২৭৫০ অবস্থানে থাকা ফয়সালের বিষয় এসেছে ইংরেজি। আগামী ২১ অক্টোবর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ভর্তির শেষ দিন। হাতে মাত্র কয়েকটি দিন থাকলেও ভর্তি নিয়ে চিন্তিত এই মেধাবী শিক্ষার্থী। পড়ালেখা চালিয়ে নিতে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন তার।
ফয়সাল পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে। তিনি ২০২১ সালে স্থানীয় হাড়িভাসা ঘাগড়া দ্বারিকামারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ- ৪.০০ পেয়ে এসএসসি এবং ২০২৩ সালে দিনাজপুর সরকারি সিটি কলেজ থেকে জিপিএ- ৪.৬৭ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন।
ফয়সাল হাবিপ্রবি ছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্ট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ স্ট্যাডিজ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃ-বিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন। ফয়সাল জানান, কেবল অর্থাভাবেই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনটিতেই ভর্তি হতে পারেননি তিনি। হাবিপ্রবিতে ভর্তির সময় টাকা জোগাড় হবে- এমন চিন্তা থাকলেও শেষ সময়ে এসে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন তার মা মারা যান। এর কিছুদিন পরই তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সৎ মায়ের সংসারে টানাপোড়ন শুরু হয়। সেসময় অর্থাভাবে পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছিলো। কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ় মনোবল তাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।
ফয়সাল জানান, তার ছোট আরও দুইভাই ও এক বোন রয়েছে। বোনটি এইচএসসির শিক্ষার্থী, তাকেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে চান তিনি। সুশিক্ষিত করতে চান ছোট দুই ভাইকেও। এজন্য তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া অত্যন্ত জরুরি। আপাতত ১২ হাজার টাকা হলেই ভর্তি নিশ্চিত করা যাবে বলেও জানান।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে প্রয়োজনে টিউশনি করিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে নিবো। কিন্তু এই মুহূর্তে ভর্তির টাকাই যোগাতে পারছিনা, পরিবারও অসচ্ছল। আমার বাবার পক্ষেও সম্ভব হচ্ছেনা পড়ালেখার খরচ চালানো। আমি চাই আমার পাশাপাশি ছোট ভাইবোনদের পড়ালেখাও চালিয়ে নিতে।
ফয়সালের বাবা আব্দুল মালেক বলেন, টানাটানির সংসার আমার। সংসার চালাতে ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালাই। এতে যা আয় হয় তা দিয়েই সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় আমাকে। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ সঠিকভাবে চালাতে পারিনা। ছেলেকে আশা দিয়ে রাখছিলাম ভর্তির টাকা জোগাড় হবে, এখনো পারিনি। এ অবস্থায় কোন সহযোগিতা পেলে আমাদের জন্য খুব উপকার হতো।
নাঈম/টিপু