ঢাকা     শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১ ১৪৩১

সম্প্রীতি মেনে একই আঙিনায় মসজিদ-মন্দিরে উপাসনা

আবু নাঈম, পঞ্চগড়  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪২, ১৩ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ১৬:৪৬, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
সম্প্রীতি মেনে একই আঙিনায় মসজিদ-মন্দিরে উপাসনা

জিতাপাড়া নতুন হাট মসজিদের পাশে জিতাপাড়া নতুন হাট সার্বজনীন দুর্গামন্দির

পঞ্চগড়ে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে প্রায় তিন যুগ ধরে একই আঙিনায় চলছে দুই ধর্মের মানুষের উপাসনা। একই আঙিনায় মসজিদ ও মন্দির থাকলেও নিয়ম মেনে কোনো বিপত্তি ছাড়াই নিজ নিজ ধর্মের মানুষের প্রার্থনা চলছে।

এ বছরও সনাতন ধর্মালম্বীদের দূর্গোৎসব শুরু থেকে বাধা-বিপত্তি ছাড়াই বন্ধুত্বের বন্ধনে সবাই চলাফেরা করছেন। আজানের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ঢাক-ঢোল ও পূজা অর্চনার শব্দ। নামাজ শেষ হলে ঢোলের শব্দে ভরে ওঠে পূর্জামণ্ডপ। স্থানীয়রা বলছেন, প্রায় তিন যুগ ধরে একই আঙিনায় উভয় ধর্মের উপাসনা চলছে। কখনও কোনো বিপত্তি ঘটেনি।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ী ইউনিয়নের জিতাপাড়া নতুন হাট মসজিদ ও জিতাপাড়া নতুন হাট সার্বজনীন দুর্গামন্দিরে এমন চিত্রের দেখা মিলেছে। একই আঙিনায় অবস্থিত মসজিদ থেকে মন্দিরের দূরত্ব মাত্র ৬০ মিটার। এরপরও বিভেদ ও ঝামেলা ছাড়াই হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষেরা যার যার ধর্ম পালন করে আসছেন।

আরো পড়ুন:

স্থানীয় মুসল্লি লুৎফর রহমান বলেন, ‘মসজিদের বয়স ৩৫ বছর হলেও মন্দিরের বয়স ৩০ বছর। আমরা আমাদের সময়মতো নামাজ আদায় করি, ওরা পূজার উৎসবে তাদের সময়মতো পূজা করে। এখানে আমরা সকলে মিলেমিশে বসবাস করি।’

আব্দুল বাতেন নামে একজন বলেন, ‘পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির হওয়ায় আমাদের আজান হলে নামাজ পর্যন্ত তারা তাদের মাইক ও ঢাক-ঢোল বন্ধ রাখে। নামাজ শেষে অন্য সময়ে আমরা স্থানীয়রা ও মুসল্লিরা মিলে তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকি।’

কথা হয় মন্দিরে আসা ভক্ত বিশ্বনাথ বর্মন ও মিঠুন রায়ের সঙ্গে। তারা বলেন, ‘গতবারের মতো এবারও পূজাকে কেন্দ্র করে আমাদের অনেক পরিকল্পনা ছিল। তবে দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর আমাদের মাঝে একটা আতঙ্ক ঢুকে পড়ে। এবার আমাদের এ উৎসব হবে কি-না, তা নিয়ে সবাই চিন্তায় ছিলাম। তবে প্রশাসনের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষের অনেক সহায়তা পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মন্দিরের পাশে একটি মসজিদ রয়েছে। আমরা সকলে মিলিতভাবে বসবাস করে আসছি। মসজিদে যখন আজান ও নামাজের সময় হয়, তখন আমরা বাদ্যযন্ত্র বন্ধ রাখি। আমরা সবাই একে অপরের ভাইয়ের মতো বসবাস করি।’

মন্দিরটির পুরোহিত আপন চক্রবর্তী বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যে বিষয়টি আছে, এখানে যথেষ্টভাবে সেই বিষয়টা ফুটে উঠেছে। আমাদের মন্দিরে যখন পূজা চলমান থাকে, তখন মসজিদে নামাজের সময় মেনে চলা হয়। একইসঙ্গে প্রশাসন, যৌথবাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবকরা, স্থানীয় মুসল্লিরা দিন-রাত আমাদের যথেষ্ট সহায়তা করেন।’

গড়িনাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দীপু বলেন, ধর্ম পালন নিয়ে আজ পর্যন্ত এখানে কোনো বিভেদ তৈরি হয়নি। একে-অপরের সহায়তা করে তাদের ধর্মীয় উপাসনা পালন করে আসছে।

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সাবেত আলী বলেন, পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে দুই ধর্মের মানুষ। এমন সম্পর্ক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও বন্ধুত্বের পরিচয় বহন করে।

তিনি জানান, দূর্গাপূজা উপলক্ষে এ মন্দিরসহ জেলার ২৯৯টি পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে।

নাঈম/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়