ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৫ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৩০ ১৪৩১

ভালো নেই রাঙামাটির টেক্সটাইল ব্যবসায়ীরা

রাঙামাটি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ১৫ অক্টোবর ২০২৪  
ভালো নেই রাঙামাটির টেক্সটাইল ব্যবসায়ীরা

ভালো নেই রাঙামাটির টেক্সটাইল ব্যবসায়ীরা। শহরের টেক্সটাইল মার্কেটগুলোতে এখানকার পাহাড়িদের বিভিন্ন ঐতিহ্যগত, হাতে তৈরি পোশাকগুলো বাহিরের টুরিস্টদের কাছে সবচে জনপ্রিয় এবং বেশি বিক্রয়ও হয়ে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ের সার্বিক পরিস্থিতি ভাল না হওয়ায় প্রশাসন থেকে তিন পার্বত্য জেলায় টুরিস্ট ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করায় রাঙামাটিতে কোনো পর্যটক ভ্রমণে আসছে না। 

রাঙামাটির শহরের তবলছড়ির টেক্সটাইল মার্কেটে সোমবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টেক্সটাইল মার্কেটের বিভিন্ন দোকানের বিক্রয়কর্মী এবং মালিকরা অবসর সময় পার করছেন।

 

এ সময় টেক্সটাইল মার্কেটের বিক্রয়কর্মীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ২০ সেপ্টেম্বরের পর থেকে ব্যবসা নেই বললেই চলে। পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের দুর্দিন চলছে। 

এদিকে রাঙামাটির টেক্সটাইল ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রাঙামাটি শহরসহ বিভিন্ন টুরিস্ট স্পটের টেক্সটাইল দোকানগুলোতে প্রায় পাঁচশ বিক্রয়কর্মী এ পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে। প্রত্যেকটা বিক্রয়কর্মীর মাসিক বেতন ৫-৭ হাজার টাকা প্রদান করতে হয়। কিন্তু বর্তমান ব্যবসার নাজুক অবস্থার কারণে কর্মীদের বেতন দিতেও বেগ পেতে হচ্ছে।

 

রাঙামাটির বেইন টেক্সটাইলের বিক্রয়কর্মী নম্রদা চাকমা বলেন, আমাদের এখন পর্যটক খুবই কম। বলতে গেলে একেবারেই পর্যটক নাই। টুরিস্ট থাকলে বেচাকেনা হয় না থাকলে একেবারেই নাই। টুরিস্ট না থাকার কারণে আমরা আর্থিকভাবে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। 

রাঙামাটি শহরের তবলছড়ির টেক্সটাইল মার্কেট সংলগ্ন জুমবাজারের বিক্রয়কর্মী রেখা চাকমা বলেন, রাঙামাটিতে টুরিস্ট প্রবেশে নিষেধ থাকায় আমাদের এখানে কোনো বেচাকেনা নেই। প্রতিমাসে আমাদের ২-৩ লাখ টাকা আর্থিকভাবে লোকসান হচ্ছে।

তবলছড়ি টেক্সটাইল মার্কেটে এন আর হ্যান্ডিক্রাফটস এর সত্ত্বাধিকারী অনুপম ত্রিপুরা বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে আমাদের ব্যবসা নাই। আমাদের এখানে টেক্সটাইল মার্কেটের বেশিরভাগ দোকান মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে টুরিস্ট না আসার কারণে। 

তিনি বলেন, সরকার ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলায় টুরিস্ট আসা যদি বন্ধ না করতো তাহলে আমাদের বেচাকেনা হতো। রাঙামাটিতে এখন মোটেও কোনো গ্রাহক নেই। প্রতিমাসে আমার দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারী বেতনসহ যাবতীয় খরচ বাবদ ৩০ হাজার টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি অতি শ্রীঘরই যদি রাঙামাটিতে টুরিস্ট প্রবেশের অনুমতি দেয় তাহলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য আরো ভালো হবে।


  
বাসন্তী শাড়ি ঘর এর রঞ্জনা পাহাড়ি বলেন, সারাদিন বসে বসে অলস সময় পার করছি, বেচাকেনা নেই। আগে প্রতিমাসে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা বিক্রয় করতাম টুরিস্টদের কাছে। এখন ৫ হাজার টাকাও বিক্রি হচ্ছে না। বেচাকেনা না থাকলেও দোকান খুলে বসে থাকি বিক্রির আশায়। 

এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, রাঙামাটির ব্যবসা বাণিজ্য টুরিস্ট নির্ভর। এখানে টুরিস্ট সমাগম যদি কম হয় তাহলে দেখা যায় এর প্রভাব প্রত্যেকটা সেক্টরে পড়ে। এ কয়েকদিনে পর্যটন ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকে বেকার হয়ে পড়েছে। পর্যটন খাতে প্রতিদিন আর্থিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে কোটি টাকার কাছাকাছি। এখানকার পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল পাহাড়িদের ঐতিহ্যগত যেসব পণ্যগুলো আছে সবগুলো বিক্রয় হয় আগত টুরিস্টদের কাছে। রাঙামাটিতে টুরিস্ট না আসার কারণে সবক্ষেত্রে ধস নেমে গেছে। আমরা আসলে হতাশ। 

তিনি আরও বলেন, ২০ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর ০৮ অক্টোবর থেকে জেলা প্রশাসন থেকে টুরিস্টদের রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলা ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাবো, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে রাঙামাটিতে পর্যটকদের আগমন এবং এখানকার অর্থনৈতিক কর্মচঞ্চলতা ফিরিয়ে নিয়ে আসতে যাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। 

সম্প্রতি এ বিষয়ে রাঙামাটিতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি বলছে, আপাতত পর্যটক ভ্রমণ বন্ধ রাখা প্রয়োজন। তাই বন্ধ রাখা রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরে খুলে দেওয়া হবে।

 

এদিকে, ৮-৩১ অক্টোবর পর্যন্ত রাঙামাটিতে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছেন জানিয়েছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। গত রোববার (৬ অক্টোবর) এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান। 

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পাহাড়ের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং জানমালের ক্ষতি এড়াতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জেলা প্রশাসন এক জরুরী সভার মাধ্যমে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে একটানা সাজেক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে আসছিলো জেলা প্রশাসন। এরপর পুরো জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে বিরত থাকার নির্দেশনা আসে।

উল্লেখ্য, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ভোরে খাগড়াছড়ি জেলার পানখাইয়া পাড়ায় মোটরসাইকেল চোর সন্দেহে মো. মামুন (৩০)  নামে এক যুবককে পেটানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে ১৯ সেপ্টেম্বর জেলার দীঘিনালা উপজেলার লারমা স্কোয়ার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে বাঙালি ও পাহাড়িদের মধ্যে সংঘর্ষের রূপ নেয়। ওই ঘটনায় সেখানে তিনজন নিহত হয়েছেন।

এ ঘটনার উত্তাপ পরদিন রাঙামাটি শহরেও ছড়িয়ে পড়ে। ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে জেলা শহরে শত শত পাহাড়ি জনতা মিছিল বের করে। সেই মিছিল থেকে বনরূপা এলাকার দোকানপাট ও স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়। পরে দুপুরে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এ ঘটনায় এক যুবক নিহত হন। আহত হয়েছেন ৬৩ জন। এছাড়াও ১ অক্টোবর খাগড়াছড়ি জেলায় আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সোহেল রানা নামে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করেছে পাহাড়ি ছাত্র-যুবকরা। এরপর ঘটনাটি কেন্দ্র করে ওইদিন পাহাড়ি-বাঙালী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

শংকর/ইমন


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়