গোপালগঞ্জে বসেছে লক্ষ্মী প্রতিমার হাট
বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম
শারদীয়া দুর্গাপূজার পর বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুই দিন অনুষ্ঠিত হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মী পূজা। প্রতি বছরের মতো এ বছর কোজাগরী পূর্ণিমা তিথিতে লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা করবেন হিন্দু ধর্মবলম্বীরা। তাই প্রতিমা বিক্রি করতে জেলার বিভিন্ন স্থানে বসেছে লক্ষ্মী প্রতিমার হাট। এসব হাট থেকে প্রতিমাসহ পূজার অনুসঙ্গীক উপকরণ কিনে নিচ্ছেন তারা।
তবে প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিমা তৈরির খরচ বাড়ার কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান প্রতিমা বিক্রেতারা। ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতিমাসহ অনুসঙ্গ জিনিসপত্রের দাম বেশি।
জেলার বিভিন্ন হাটে ঘুরে জানা গেছে, লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে জেলার হিন্দু ধর্মবলম্বীদের বাড়ি বাড়ি মণ্ডপ তৈরি করে লক্ষ্মী মূর্তি স্থাপন করা হবে। পরে আশ্বিন মাসের কোজাগরী পূর্ণিমা তিথিতে ধন সম্পদের দেবী লক্ষ্মী পূজা করবেন হিন্দু ধর্মবলম্বীরা। ঢাক, ঢোল আর উলুধ্বনি মুখরিত হয়ে উঠবে প্রতিটি ঘর।
এ পূজা উপলক্ষ্যে জেলার শহরের খাটরা সার্বজনীন কালীবাড়ী, সদর উপজেলার রুঘুনাথপুর, সাতপাড়, বৌলতলী, ভেন্নবাড়ী, এবং কোটালীপাড়া, টুঙ্গিপাড়া, কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বসেছে অর্ধ শতাধিক লক্ষ্মী প্রতিমার হাট। একটি ছোট প্রতিমা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা এবং বড় প্রতিমা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এসব হাটে ঘুরে ঘুরে দেশে শুনে দর দাম করে পছন্দ আর সাধ্য মত কিনছেন লক্ষ্মী প্রতিমা।
এসব হাটে শুধু প্রতিমাই নয় পাওয়া যাচ্ছে পূজার অন্যান্য উপকরণও। সোলার ফুল, নৌকা, কলাগাছ, মালা, নলডুগলি লতা, হলুদগাছ, পদ্ম ফুলসহ বিভিন্ন উপকরণ বিক্রি হচ্ছে এ হাটে। দেবীর কৃপায় ধন-সম্পদ ও আশির্বাদের আশায় এ বছর লক্ষ্মী পূজা করবেন তারা। সেই সাথে একই হাটে সকল উপকরণ পাওয়া কষ্টের হাত থেকেও বেঁচে যাচ্ছন ক্রেতারা।
জেলা শহরের বাসিন্দা কমলেশ বিশ্বাস বলেন, ‘এ বছর বাড়ীতে লক্ষ্মী পূজা করব। তাই খাটরা সার্বজনীন কালীবাড়ী বসে হাটে লক্ষ্মী প্রতিমা কিনতে এসেছি। পছন্দমত প্রতিমাও কিনেছি। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর লক্ষ্মী প্রতিমার দাম অনেক বেশি। তারপরে মায়ের কৃপা পেতে পূজা করব।’
ক্রেতা সুবল মজুমদার বলেন, ‘এ বছর লক্ষ্মী পূজা বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুই দিন অনুষ্ঠিত হবে। তাই প্রতিমা কিনতে এখানে এসেছি। তবে ঘুরে দেখলাম প্রতিমার দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। যে প্রতিমার দাম ১০০ টাকার কবার তা তা ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তারপরেও পছন্দ হলে প্রতিমা কিনে নিয়ে যাব।’
অপর ক্রেতা সঞ্জয় সাহা বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতিমার দাম কিছুটা বেশি। এ ছাড়া পূজার অনুসঙ্গ কলাগাছ ৫০ টাকা, একটি নৌকা ৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তারপরে সাধ্যের মধ্যে থেকে প্রতিমাসহ পূজার অনুসঙ্গীক জিনিসপত্র এখান থেকেই কিনে নিচ্ছি। একই হাটে সকল উপকরণ পাওয়া কষ্টের হাত থেকে বেঁচে যাচ্ছি।’
খাটরা সার্বজনীন কালীবাড়ীতে প্রতিমা বিক্রি করতে আসা রমেশ পাল বলেন, ‘লক্ষ্মী পূজা এ বছর দুই দিন অনুষ্ঠিত হবে সেজন্য এক হাজার পিস প্রতিমা নিয়ে হাটে এসেছি। ক্রেতারাও হাটে আসছে, বিক্রিও ভালো। তবে প্রতিমা তৈরির মাটি থেকে শুরু করে রংসহ অন্যন্য উপকরণের দাম বেশি। তাই প্রতিমা তৈরিতে খরচ বেশি হওয়ায় দাম একটু বেড়েছে। ক্রেতা বেশি হলে প্রতিমা বিক্রি করে লাভ করতে পারব।’
অপর বিক্রেতা মিঠুন পাল বলেন, ‘এ বছর বিভিন্ন সাইজের ৬০টি প্রতিমা বিক্রির জন্য এনেছি। তবে কষ্টের তুলনায় প্রতিমার দাম কম। বিভিন্ন দামে প্রতিমা বিক্রি করছি। আশা করি বিক্রি ভালো হবে।’
অপর বিক্রেতা সুনীল পাল বলেন, ‘আমার এখন আর আগে মত লাভ করতে পারি না। যা লাভ হয় তাই দিয়ে কোনো রকমে দিন চালিয়ে নেই। তারপরেও বাপ দাদার পেশা ছাড়তে পারি না। এ পেশা টিকিয়ে রাখছি।’
বিক্রেতা সুমন বিশ্বাস বলেন, ‘এসব হাটে শুধু প্রতিমাই নয় পাওয়া যাচ্ছে পূজার অন্যান্য উপকরণও। সোলার ফুল, নৌকা, কলাগাছ, মালা, নলডুগলি লতা, হলুদগাছ, পদ্ম ফুলসহ বিভিন্ন উপকরণ বিক্রি হচ্ছে। কলাগাছ ৫০ টাকা, একটি নৌকা ৫০ টাকা সোলার মালা ১৫০, নলডুগলি লতা ১০ থেকে ২০ টাকা, হলুদগাছ ২০ টাকা, পদ্ম ফুল ১০ দরে বিক্রি করা হচ্ছে।’
গোপালগঞ্জ/সনি