জীবনসঙ্গী খোঁজার মেলা
দিনাজপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে এক ব্যতিক্রমী মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক সময় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা এই মেলায় পছন্দের জীবনসঙ্গী খুঁজতে আসতেন। সেই থেকে স্থানীয়দের কাছে এটা জীবনসঙ্গী খোঁজার (বাসিয়া হাটি) মেলা নামে পরিচিত। যদিও কালের বিবর্তনে মেলার সেই জৌলুস হারিয়েছে। এখন মেলা অনুষ্ঠিত হলেও কেউ আর জীবনসঙ্গী খোঁজেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রতিমা বিসর্জনের পরের দিন উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হয়েছে জীবনসঙ্গী খোঁজার মেলা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, একদিনের এই মেলায় অংশগ্রহণে সকাল থেকেই দিনাজপুর ছাড়াও রংপুর, রাজশাহী, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারীসহ আশপাশের জেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন আসতে শুরু করেন। দুপুরের পর থেকেই জমজমাট হয়ে ওঠে পুরো মাঠ, সমাগম হয় হাজারো মানুষের।
এক সময় মেলার বিশেষ আকর্ষণ ছিল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীদের পছন্দের জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার প্রচলন। এখানে কোনো পাত্র-পাত্রী পছন্দ হলে পরিবারের মাধ্যমে ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়া হতো। তবে কালের বিবর্তনে মেলার ঐতিহ্যবাহী সেই রীতিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় বাহারি কাঁচের চুড়ি, রঙিন ফিতা, লিপস্টিক, কানের দুল, ঝিনুক ও মাটির তৈরি তৈজসপত্র, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দা, কুড়াল, হাড়ি ও পাতিলসহ বিভিন্ন খাবারের দোকানে পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা।
বগুড়া থেকে আসা মিস্টার টুডু বলেন, এক সময় এই মেলায় জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার প্রচলন ছিল। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সব বদলে গেছে। এখন এই রীতিতে ভাটা পড়েছে।
ঠাকুরগাঁও থেকে আসা সিমিনি হেমরম বলেন, সময়ের সঙ্গে আদিবাসীদের জীবন যাত্রায় এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাই পুরনো ঐতিহ্যগুলি অনেকটাই মুছে যেতে বসেছে।
মেলার আয়োজক কমিটি ও বীরগঞ্জ থানা আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি শীতল মার্ডি বলেন, পূর্ব পুরুষেরা এই মেলা শুরু করেন। আমরা শুধু ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যাচ্ছি। তবে কবে থেকে এ মেলার প্রচলন শুরু হয়েছে তা সঠিকভাবে বলতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, এক সময় এই মেলায় জীবনসঙ্গী খোঁজা হলেও এখন আর তেমন হয় না। মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ করে থাকেন।
মোসলেম/কেআই