ঢাকা     বুধবার   ২০ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৫ ১৪৩১

এইচএসসি’র ফল

আমার ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে: প্রিয়’র মা

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০১, ১৬ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ১৯:১৩, ১৬ অক্টোবর ২০২৪
আমার ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে: প্রিয়’র মা

ছেলের পড়ার টেবিলের সামনে বসে কাঁদছেন মা রেহেনা পারভীন। ইনসেট শাওয়ান্ত মেহতাপ প্রিয়

শাওয়ান্ত মেহতাপ প্রিয়। যশোর সরকারি সিটি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ফলে প্রিয় জিপিএ-৪.১০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন পরীক্ষায়। তার পাস করার খবর পরিবার-স্বজন ও বন্ধুরা পেলেও জানতে পারেননি এই শিক্ষার্থী। 

গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সেদিন যশোর শহরে বিজয় মিছিল বের হয়। এসময় কিছু দুষ্কৃতকারী চিত্রামোড়স্থ সড়কে অবস্থিত পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে অগ্নিসংযোগ করে। সেসময় হোটেলটিতে আটকা পড়া মানুষদের বাঁচাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মারা যান এই শিক্ষার্থী। 

আরও পড়ুন: শাহীন চাকলাদারের হোটেলে অগ্নিসংযোগ-লুটপাট ও ২৪ জন খুনের ঘটনায় মামলা

আরো পড়ুন:

প্রিয় যশোর শহরের মুজিব সড়কস্থ এলাকার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক শাকিল ওয়াহিদ ও গৃহিনী রেহেনা পারভীন দম্পত্তির সন্তান। তার আরও দুই ভাই রয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যায় মুজিব সড়কে গিয়ে দেখা যায়, নিল রং করা চারতলা একটি বাড়ির নিচ তলায় পরিবারের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন প্রিয়। এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করায় যখন এ বাড়িটিতে আনন্দ উল্লাস হওয়ার কথা তখন সবাই শোকে কাতর।  

আরও পড়ুন: শাহীন চাকলাদারের হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৪

সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতেই প্রিয়’র ব্যবহৃত জিনিসপত্র খুলে দেখাতে শুরু করেন তার মা রেহেনা পারভীন। টেবিলের পাশে সাজিয়ে রাখা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বই নেড়ে দেখাচ্ছিলেন তিনি। এসএসসিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পাওয়া প্রিয়’র পুরস্কার ও ক্রেস্ট এনে ছেলের সাফল্যের গল্প শুনালেন তিনি।

রেহেনা পারভীন বলেন, ‘আমার ছেলে খুব ভালো ছিল। মা-বাবা ছাড়া তার জীবনে কিছু ছিলো না। স্বপ্ন দেখতো দুই ভাইকে প্রতিষ্ঠিত করবে, মা-বাবার দেখাশুনা করবে। এসব এখন শুধুই স্বপ্ন। প্রিয় ‘র পাসের খবর আমার জন্য খুশির। যাকে নিয়ে এই খুশি উদযাপন করবো, সে তো আমার কাছে নেই। আগুনে পুড়ে আমার স্বপ্নটা শূন্য করে দিয়েছে।’ 

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার সবই আছে, শুধু নেই প্রিয়। মনে হয়, এখনই আমার কাছে ফিরে আসবে। বলবে, দেখো মা আমি পাস করেছি। তোমার দোয়া কাজে লেগেছে। সবাই বলছে, সে ভালো রেজাল্ট করেছে। আমার ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। আমি থাকতে পারছি না আমার সন্তানকে ছাড়া। সে বেঁচে থাকলে কতো আনন্দ করত। ওর সফলতা দেখে গর্ব করতাম আমি।’

বারবার রেহেনা পারভীন কান্নাকাটি করলেও শক্ত থাকার চেষ্টা করছিলেন প্রিয়’র বাবা শাকিল ওয়াহিদ। তিনি তার স্ত্রীকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। শাকিল ওয়াহিদ বলেন, ‘আমার ছেলে বলতো, বাবা তোমার বয়স হয়ে গেছে, তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না। আমি আইএলটিএস করবো, বিদেশ যাবো। সংসারটা আমিই দেখবো। ছোট দুই ভাইকে বড় করবো।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে তো ৫ তারিখে মারা গেছে। তবে আজ (গতকাল মঙ্গলবার) রেজাল্টের খবর শুনে আত্মীয় স্বজনরা যখন ফোন দিচ্ছে, তখন বুকের ভেতরটা ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, আমার সন্তানের দ্বিতীয় মৃত্যু হল। এসএসসিতে প্রিয় জিপিএ-৫ পেলে এলাকাবাসীকে আধামণ মিষ্টি খায়িয়ে ছিলাম। এবার ছেলে নেই......। আমি কষ্ট বুকে চেপে দিন পার করছি।’

স্থানীয়রা জানান, প্রিয় অনেক সাহসী ছেলে ছিল। গত ৫ আগস্ট বিকেলে যখন দুষ্কৃতকারীরা চিত্রামোড়স্থ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন ১৪ তলা বিশিষ্ট জাবির হোটেল ইন্টারন্যাশনালে আগুন দেয় তখন আটকা পড়াদের উদ্ধারে এগিয়ে যান প্রিয়। এ সময় দগ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। 

প্রসঙ্গত, বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের পাঁচতারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা যান ২৪ জন। এদের মধ্যে একজন বিদেশি নাগরিক ছিলেন। ওই ঘটনায় আহত হন প্রায় শতাধিক।

রিটন/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়