ঢাকা     বুধবার   ১৬ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ০ ১৪৩১

চাঁদপুরে বরফ কল বন্ধ, বেকার হতে চলেছে ৫০০ শ্রমিক

জেলা প্রতিনিধি, চাঁদপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪৯, ১৬ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ২১:১১, ১৬ অক্টোবর ২০২৪
চাঁদপুরে বরফ কল বন্ধ, বেকার হতে চলেছে ৫০০ শ্রমিক

ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত, ক্রয়-বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা চলায় চাঁদপুরের সকল বরফ কল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা টাস্কফোর্স। এতে দেশি মাছ বেচাকেনায় জড়িত শহরের বড়স্টেশন মাছঘাটের প্রায় পাঁচ শতাধিক বরফ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। একই সাথে দেশীয় মাছ বেচাবিক্রিতে ভাটা পড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে মাছঘাটে গিয়ে বরফ শ্রমিকদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে।

শ্রমিকরা জানান, পদ্মা-মেঘনায় মা ইলিশের অভয়াশ্রমের কারণে প্রশাসন বরফ কলগুলো সব বন্ধ রেখেছে। বরফ কল বন্ধের ব্যাপারে প্রশাসনের সিদ্ধান্তে তারাও একমত। কিন্তু ঘাটে আসা দেশীয় মাছগুলো বরফ সংকটে পচে নষ্টে হচ্ছে। পাইকাররা নিয়মিত বরফ না থাকায় ঘাটে আসতে চাচ্ছে না। এতে প্রায় ৫০০ শ্রমিক এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ধেঁররা, ওয়ারলেস, বিপুনীবাগ, বৌ বাজার, চৌরাস্তা, ভাটিয়ালপুরসহ আরও বেশ কয়েক স্থানে দেশীয় মাছের বেচাবিক্রি হচ্ছে। সেখানে বরফ না থাকায় ভোররাতের নিলামে ওঠা মাছ দিনব্যাপী বিক্রি করতে গিয়ে তা ক্রেতার হাত হয়ে বাসায় পৌঁছানোর আগেই নরম হয়ে যাচ্ছে, ক্ষেত্র বিশেষে পচে যাচ্ছে।

পুরানবাজারের খাল রাস্তার প্রবীণ মাছ বিক্রেতা আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, ‘বরফ না থাকায় মাছ পচে যাচ্ছে। বিশেষ করে চিংড়ি, পুঁটি, রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, ব্রিগেটসহ অন্যান্য মাছ দ্রুত নরম হয়। এজন্য বরফ খুব দরকার।’

ক্রেতারা বলছেন, বরফ না থাকায় রুই, কাতলা, পাঙ্গাস মাছ কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রেখে আড়তে নিয়ে বিক্রি হচ্ছে। যাকে অক্সিজেনের মাছ বলা হচ্ছে। এগুলো স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ঘাটের শ্রমিক মো. হোসেন বলেন, ‘আমরা শুধু জিওল মাছ বিক্রি করছি। শরিয়তপুর থেকে আসা রুই, কাতল, কার্প, মৃগেলসহ বাংলা মাছ এবং খুলনা থেকে আসা চিংড়ি মাছ ঘাটে নিয়ে বসে আছি। বরফ না থাকায় পাইকারেরা মাছ নিতে আগ্রহী হচ্ছে না। এতে দিনে লাখ লাখ টাকার মাছ প্রতিদিন ক্ষতির সম্মুখে পড়ছে। বড়স্টেশনের প্রায় অর্ধশত আড়ৎদার বড় ধরনের লসের হুমকিতে রয়েছে। তাই ঘাটে অন্তত একটি বরফ কল চালুর অনুমতি প্রয়োজন।’

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শবেবরাত সরকার বলেন, ‘ইলিশ মাছ বেচাবিক্রি ও সংরক্ষণে ঘাটের কেউ যদি জড়িত থাকে তাহলে তো আমরা সবাই মিলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। জিওল মাছের বাজার ধরে রাখতে অন্তত একটি বরফ কল চালু রাখার অনুমতি না দিলে আমারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ব। বরফ না থাকায় পাইকাররাও এখানে জিওল মাছ কিনতে আসছে না। যে কারণে এখানের প্রায় ৫০০ এর অধিক শ্রমিক অলস সময় কাটাচ্ছেন এবং অভাব অনটনে পড়ে গেছেন। তাই অন্তত একটি বরফ কল চালুর অনুমতি দিতে প্রশাসনের প্রতি আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি।’

চাঁদপুর মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল বারী জমদার মানিক বলেন, ‘প্রশাসন অন্তত একটি বরফ কল চালুর অনুমতি দিক। প্রয়োজনে নীরব পর্যবেক্ষণ রাখুক যে এটি ইলিশ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা। একটি অন্তত বরফ কল অনুমোদন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, ‘বরফ কল বন্ধের সিদ্ধান্ত আমার একার নয়। বরং এটি জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত। বিচার বিশ্লেষণ করেই এবার বরফ কল বন্ধ রাখা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, চাঁদপুরের হাইমচরের চরভৈরবী হতে মতলব উত্তরের ষাটনল পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনার ৭০ কিলোমিটার এরিয়ায় ইলিশ অভয়াশ্রমের কারণে ১৩ অক্টোবর হতে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত মা ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২২ দিন ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা, বেচা বিক্রিসহ পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দেয় প্রশাসন।

অমরেশ/সনি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়