ঢাকা     শুক্রবার   ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ২ ১৪৩১

চাঁদাবাজির মামলায় ছেলেকে ফাঁসানোর অভিযোগ করলেন বিএনপির সাবেক এমপি

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ১৮ অক্টোবর ২০২৪  
চাঁদাবাজির মামলায় ছেলেকে ফাঁসানোর অভিযোগ করলেন বিএনপির সাবেক এমপি

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির উদ্দিন আহমেদ

কিশোরগঞ্জে অন্যদের দখলে থাকা আটটি যাত্রীবাহী ট্রলারের অংশীদারিত্ব ফিরে পেতে আদালতে মামলা করেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মোসাব্বির হোসেন সাদ্দাম। তাকেই উল্টো চাঁদাবাজির মামলায়  ফাঁসানো হয়েছে এমন অভিযোগ করে শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলন করেছেন কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির উদ্দিন আহমেদ। জেলা শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। 

মোসাব্বির হোসেন সাদ্দাম সাবেক সংসদ সদস্য কবির উদ্দিন আহমেদের ছেলে।

সংবাদ সম্মেলনে কবির উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন,  তার ছেলেকে (সাদ্দাম) আগে আটক করে এরপর মামলা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক ও কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর ইন্ধনে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

চাঁদাবাজির মামলায় অভিযোগ করা হয়, করিমগঞ্জ চামড়াঘাট থেকে ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি বাজার পর্যন্ত নদীপথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী নৌকার মালিকদের সাদ্দামসহ অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জন গত ১১ আগস্ট নিয়ামতপুর বাজারের মোড়গ মহল স’মিল সংলগ্ন  অফিসে ডেকে আনেন। সেখানে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ২ লাখ করে মোট ২২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। নৌকার মালিকরা চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে আসামিরা তাদের ভয়ভীতি দেখানোসহ ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া
এমনকি হত্যার হুমকি দেয়। পরে নৌকার মালিকরা ভয়ে সাড়ে ৭লাখ টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য হন।

মামলায় করা অভিযোগকে মিথ্যা ও কাল্পনিক গল্প দাবি করে কবির উদ্দিন আহমেদ জানান, ‌প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, ওই রুটে চলাচলকারী ১১টি যাত্রীবাহী ট্রলারের মধ্যে আটটি ট্রলারের ৫০ভা গ মালিকানা ছিল তার দুই ছেলে মোসাব্বির হোসেন সাদ্দাম ও তাওসিফ কবির সায়েমের। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে তারা ক্রয়সূত্রে এ মালিকানা অর্জন করেন। দীর্ঘদিন তারা এভাবেই অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে জয়সিদ্ধি গ্রামের মো. নূরুজ্জামানসহ অন্যদের সঙ্গে ব্যবসা করছেন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় এমপি তৌফিকের প্রভাব ও ইন্ধনে নূরুজ্জামানরা আমার ছেলেদের অংশ তাদের কাছে বিক্রি করে দিতে চাপ সৃষ্টি করেন। রাজি না হওয়ায় ২০১৬ সাল থেকে ব্যবসার লভ্যাংশের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন। তারা আওয়ামী ঘরনার লোক হওয়ায় এতদিন ভয়ে আমার ছেলেরা চুপ ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আমার ছেলে তাওসিফ কবির সায়েম বাদী হয়ে অংশীদারিত্ব ফিরে পেতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৬ মামলা করে। আদালতের বিচারক মামলার অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে করিমগঞ্জ থানার ওসিকে আদেশ দেন।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, আদালতে অভিযোগের পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় সেনা ক্যাম্পে চাঁদাবাজির অভিযোগ করে। গত ১৩ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর বাজার থেকে মোসাব্বির হোসেন সাদ্দামকে আটক করে। পরে ১৪ অক্টোবর সাদ্দাম ও সায়েমসহ ১৫-২০জনকে আসামি করে একটি মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা করা হয়। মামলার বাদী হন ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের পাগলসি গ্রামের মো. নূরুজ্জামান। ওই মামলায় সাদ্দামকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালাতে পাঠায় পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, কবির উদ্দিন আহমেদের জেষ্ঠ্য ছেলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সুমন, অপর ছেলে শাকিল আহমেদ নাদভি, করিমগঞ্জ উপজেলা বিএনপি নেতা মো. জাহাঙ্গীর প্রমুখ।

করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘মূলত সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে সাদ্দামকে গ্রেপ্তার রা হয়। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলাটির তদন্ত চলছে। অন্যদিকে আদালতে দায়ের করা মামলার কপি আমরা এখনো পাইনি। এটি আমাদের হাতে এলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রুমন/মাসুদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়