ঢাকা     মঙ্গলবার   ২২ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ৬ ১৪৩১

টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ ক্যান্সার আক্রান্ত সামিয়ার

নিউজ ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২২, ২২ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ২২:৩৮, ২২ অক্টোবর ২০২৪
টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ ক্যান্সার আক্রান্ত সামিয়ার

সামিয়া তাহসিন

কী হয়েছে সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই সামিয়ার। বাড়ির বিছানায় শুয়ে কাটছে দিন। প্রতিদিনই প্রতিবেশী, আত্নীয় স্বজন ও স্কুলের সহপাঠীরা তাকে দেখতে আসে। অনেক দিন ধরে স্কুলে যেতে না পেরে হাঁসফাঁস ধরে গেছে। বাবা-মাসহ সবাইকে শুধু একই প্রশ্ন, ‘কবে স্কুলে যাব? আমার যে আর ভালো লাগে না!’  কিন্তু সে কি আর কোন দিন স্কুলে যেতে পারবে?  এমন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 

সামিয়া তাহসিনের এই আকুতি শুনতে শুনতে বেদনায় মানসিকভাবে ভালো নেই তার স্বজনরাও। দুঃখে চোখ ফেটে জল এলেও মুখ বুজে সব সইতে হয় তাদের। বাচ্চাটার সামনে কোনোভাবেই প্রকাশ করতে পারে না যে, সে মরণব্যাধী ক্যানসারে আক্রান্ত এবং টাকার অভাবে তার চিকিৎসাও বন্ধ। 

প্রথম দিকে সামিয়ার জ্বর জ্বর লাগত, মাথায় মাঝে মাঝে প্রচণ্ড ব্যাথা, বাঁ চোখটিও বুঁজে আসত। জোর করেও তাকিয়ে থাকতে পারত না। চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হলে তার ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। চলতি বছরের জুন মাসের ২০ তারিখে ধানমণ্ডির গ্রিন লাইফ হাসপাতালে টিউমার অপসারণ করা হয়। বায়োপসি রিপোর্টে সামিয়ার ক্যানসার ধরা পড়ে। 

সামিয়ার বাবা মো. শুজাউদ্দীন সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের মুড়াগাছা গ্রামের এক অতি সাধারণ দরিদ্র কৃষক। তার মা জোহরা খাতুন একজন গৃহিণী। 

সামিয়া ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) প্রফেসর ডা. মো. ইউছুফ আলীর অধীনে ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছিল। চিকিৎসকরা বলেছেন, ২০২৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ১৭টি কেমো ও ২৮টি রেডিও থেরাপি দিতে পারলে শিশুটি সুস্থ হয়ে যাবে। আর সেজন্য প্রয়োজন অন্তত ২০ লক্ষ টাকা।

ইতোমধ্যে সামান্য চাষের জমি ও অন্যান্য সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে সন্তানের চিকিৎসার জন্য প্রায় ৮ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছেন সামিয়ার বাবা। পুরো পরিবার এখন নিঃস্ব, দিশেহারা। 

টাকার অভাবে দুই মাস ধরে চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। ১৭টি কেমোর মধ্যে মাত্র ৫টি কেমো দেওয়া হয়েছে। গত আগস্ট মাসের ২৫ তারিখে তার কেমো দেওয়া হয়েছিল, পরেরটার দিন ছিল সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ তারিখে। বাবা টাকা জোগাড় করতে না পারায় সামিয়ার পরবর্তী কেমোর জন্য আর ঢাকায় আসা হয়নি। এদিকে দিন দিন নষ্ট হতে চলছে সামিয়ার দৃষ্টি শক্তিও।

চার ভাইবোনের মধ্যে সামিয়া তৃতীয়। সে স্থানীয় এইচএমএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। অত্যন্ত মেধাবী এই শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণিতে খুবই ভাল রেজাল্ট করে এসেছে। বোনের মধ্যে সবার বড়টি এইএসসি পরীক্ষার্থী। তার পরেরজন নবম শ্রেণিতে পড়ছে। সবার ছোট ভাই দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

সামিয়াকে নিয়ে বর্তমানে চরম বিপদে রয়েছেন বাবা শুজাউদ্দীন। অন্যান্য সন্তানদের লেখাপড়াও প্রায় বন্ধ, সামিয়ার চিকিৎসা আর সংসার খরচ- কোন দিকে যাবেন এই অসহায় পিতা? তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে প্রাণপ্রিয় সন্তান, এটা দেখা ছাড়া আর কোনো পথ নেই তার। 

এদিকে সামিয়া তাহসিনের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে তার তিন ভাইবোন ও মা। কীভাবেই বা তাকে বলবে, বেশি দিন আর পৃথিবীর আলো দেখতে পাবে না সে! আর কোনো দিনই স্কুলে যেতে পারবে না। পরীক্ষা দিতে বা ক্লাস করতে পারবে না। খুনসুটিতে মেতে উঠতে পারবে না বান্ধবীদের সাথে। তার হাসি মুখটি আর কখনই মুক্তো ঝরাবে না, সুখে অন্তর ভরিয়ে দেবে না বাবা-মায়ের!  

প্রাণপ্রিয় সন্তানকে বাঁচাতে সমাজের হৃদয়বান মানুষের কাছে আকুল আবেদন জানিয়ে ছিলেন সামিয়ার বাবা। এর আগেও কয়েকটি নিউজ পোর্টাল ও পত্রিকায় সামিয়াকে নিয়ে নিউজ ছাপা হয়েছিল কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি। হয়তো দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বন্যার কারণে আর্থিক সহযোগিতা আসেনি। তবুও তার পরিবার এখনও চেয়ে আছে বিত্তবান ও সমাজের অন্যান্য লোকদের দিকে।  

এখনও সময় আছে বাকি চিকিৎসা পেলে ফিরিয়ে আসতে পারে সামিয়ার মুখের হাসি। প্রয়োজন শুধুই সামান্য একটু ভালোবাসা আর অন্তর থেকে সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসা। আপনার খুব সামান্য অংশগ্রহণও হয়তো সামিয়ার বেঁচে থাকার রসদ হতে পারে। 

তালায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহানুভূতি  প্রতিষ্ঠাতা মো. আব্দুল আলিম মোড়ল বলেন, ‘মানুষের মন পাথরের মত হওয়া উচিত নয়। সবার কিছু কিছু করে সহযোগিতা করা উচিত। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সামিয়াকে বাঁচানো সম্ভব হবে এমনটাই আমাদের বিশ্বাস।’ 

সামিয়াকে বাঁচাতে তার বাবা শুজাউদ্দীনের বিকাশ, নগদ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আপনার সহায়তা পৌঁছে দিতে পারেন।  

মো. শুজাউদ্দীন, মোবাইল, বিকাশ ও নগদ নম্বর- ০১৭৩৫-১৮৬৭৯০, সঞ্চয়ী ব্যাংক হিসাব নম্বর- ০১০০৫৪০০৬, সোনালী ব্যাংক, মাগুরা বাজার শাখা, তালা, সাতক্ষীরা।

মুকুল/সনি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়