ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৬ ১৪৩১

ল্যাপটপ লোপাটের অভিযোগ প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে 

শরীয়তপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩২, ২৫ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ১৬:৪১, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের শেখ ফজিলাতুন নেছা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ৮টি ল্যাপটপ লোপাট হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সুপার ফখরুল ইসলাম আনসারী ল্যাপটপগুলো লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর আগেও তিনি নতুন বই চুরির ঘটনায় হাতেনাতে ধরা পড়ে ছয় মাসের জন্য বরখাস্ত হয়েছিলেন। 

ফখরুল ইসলাম আনসারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ওঠায় শিক্ষা কর্মকর্তা ও আইসিটি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। 

মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান, উপজেলার শিক্ষা ও আইসিটি কর্মকর্তার কার্যালয় ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর থেকে গোসাইরহাট উপজেলার শেখ ফজিলাতুন নেছা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য ১৭টি ল্যাপটপ সরবরাহ করা হয়। সম্প্রতি ল্যাবে গিয়ে শিক্ষার্থীরা দেখতে পান সেখানে মাত্র ৯টি ল্যাপটপ রয়েছে। 

বিষয়টি উপজেলার শিক্ষা ও আইসিটি কর্মকর্তার কাছে জানানো হলে মাদ্রাসার ল্যাপটপের খোঁজ জানতে তদন্ত শুরু করেন উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম। গত ২২ সেপ্টেম্বর পরিদর্শনকালে ৮টি ল্যাপটপ না থাকার বিষয়টির সত্যতা মেলে। পরে মাদ্রাসার সুপার ফখরুল ইসলাম আনসারীকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে বাকি ল্যাপটপগুলো সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ নেওয়া, ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন, উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ এবং পাঠাগারের জন্য বরাদ্দকৃত তিন লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসার সুপারের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ। এই মাদ্রাসা সুপারকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন তারা। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থী জানান, সুপার স্যার মাদ্রাসার জন্য বরাদ্দকৃত টাকাপয়সা ও ল্যাপটপ আত্মসাৎ করে শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করছেন। তিনি আমাদের গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য আসা সরকারি বরাদ্দের ৭০ হাজার টাকা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বড় ভাইদের জানানো হয়। তারা পরবর্তীতে সুপারকে বললে সুপার কয়েকজনের টাকা ফেরত দেন। এখনো অনেকেই টাকা পায়নি।

মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষার্থী নোমান হিমেল বলেন, ‘মাদ্রাসার সুপার দীর্ঘদিন ধরে নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে বিভিন্ন সময় মাদ্রাসার অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তিনি তার ইচ্ছামতো মাদ্রাসার সকল কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সর্বশেষ তিনি বিশেষ বরাদ্দের তিন লাখ টাকা, যা পাঠাগারের জন্য বরাদ্দকৃত ছিল, সেটি আত্মসাৎ করেছেন। অথচ, আমাদের মাদ্রাসায় কোনো পাঠাগার নেই। এই দুর্নীতিবাজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা জোর দাবি জানাই।’

মাদ্রাসার সহকারী সুপার ফজলুর রহিম জানান, ‘২২ সেপ্টেম্বর আইসিটি অফিসার ল্যাব খুলে ১৭টি ল্যাপটপের মধ্যে ৯টি পান আর ৮টি ল্যাপটপ না পেয়ে তাকে জানান। তবে এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে সুপার মাদ্রাসায় আসছেন না। 

সহকারী সুপার বলেন, ‘আমি জানি না, কে বা কীভাবে ল্যাপটপগুলো খোয়া গেছে। তবে সুপার স্যারের অনুপস্থিতির পর থেকেই এ বিষয়টি সামনে আসে।’

তবে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে মাদ্রাসা সুপার ফখরুল ইসলাম আনসারী দাবি করেন, সরকারের পরিবর্তনের পর কিছু দুষ্কৃতকারী তাকে হুমকি দিয়ে মাদ্রাসায় যেতে বাধা দিচ্ছে এবং পদত্যাগের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘আমি মাদ্রাসা থেকে যাওয়ার আগে ১৭টি ল্যাপটপ ল্যাবে রেখে গেছি। কোনো ল্যাপটপ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেনি।’

এ ব্যাপারে উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে মাদ্রাসা পরিদর্শনকালে ৮টি ল্যাপটপ না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। মাদ্রাসার সুপারকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে বাকি ল্যাপটপগুলো সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। তবে অসুস্থতার কারণে তদন্ত শেষ করতে পারিনি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত শেষ করে যদি সুপার দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আকাশ/সনি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়