ঢাকা     শনিবার   ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ১০ ১৪৩১

আলোর রেখা দেখছেন গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মীরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৫৮, ২৫ অক্টোবর ২০২৪  
আলোর রেখা দেখছেন গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মীরা

ছবি: সংগৃহীত

উপদেষ্টাসহ সরকারের একাধিক শীর্ষ নীতি-নির্ধারক এবং গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তাদের সুদৃষ্টির ইঙ্গিতে চাকরি স্থায়ীকরণের আশা দেখছেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। নোবেলজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠানটির দৈনিক মজুরির কর্মীরা দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। 

এর মধ্যে কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিলে আগামী ৮ নভেম্বর শুক্রবার গ্রামীণ ব্যাংকের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পরিষদ কৃতজ্ঞতা সমাবেশ করবে। 

গ্রামীণ ব্যাংকের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের দীর্ঘ বঞ্চনার ইতিহাস 
নব্বুইয়ের দশকে গ্রামীণ ব্যাংকের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা পিয়ন-কাম-গার্ড হিসেবে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে (নো ওয়ার্ক, নো পে) কাজ করে আসছে। সে সময় থেকে কয়েক হাজার কর্মীকে কাজ করানো হলেও তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হচ্ছে না। তাদের কোনো কারণ দর্শানো ও লিখিত অভিযোগ ছাড়া যেকোনো তাদের ছাঁটাই করা হয়। 

তাদের নির্ধারিত কর্মঘণ্টা/সবেতন/সাপ্তাহিক/সরকারি/উৎসব/ঐচ্ছিক/ অসুস্থতাকালীন ছুটি বা বোনাস নেই। নিয়োগপত্র-মাসিক বেতন-ইনক্রিমেন্ট-ওভারটাইম-গ্রাচুইটি-প্রভিডেন্ট ফান্ড-পেনশনসহ শ্রম আইনে বর্ণিত অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। 

বহু বছর ধরে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা, দৈনিক মজুরি ছিল সর্বশেষ ৬০০ টাকা ছিল। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ২৪ ঘণ্টার কাজকে তিন ভাগ করে দেখিয়ে প্রতিটি কাজকে ঐচ্ছিক করা হয়েছে। এতে দিনে অফিসের কাজে ৬০০ টাকা, রাতে অফিস পাহারার জন্য মাসে ৪০০০ টাকা ও ঝাড়ুদারের কাজের জন্য মাসে ১২০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা হয়। 

এসব পদে ১০ বছরের বেশি সময় ধারাবাহিক কাজ করলে বিদায়কালীন অনুদান ৫ লাখ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও ১০ বছর হওয়ার আগেই নানা অজুহাতে ছাঁটাই করা হয়। প্রতি ঈদে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় ৪০০০ টাকা। শ্রম আইনে তিন মাস অস্থায়ী কাজ করার পর চাকরি স্থায়ীকরণের কথা থাকলেও তা লঙ্ঘন হচ্ছে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে। 

গ্রামীণ ব্যাংকের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের দীর্ঘ লড়াই 
চাকরি স্থায়ীকরণ চেয়ে ২০১২ সাল থেকে এই বঞ্চিত কর্মীরা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আসছে। ২০১৮ সালে ব্যাংকের সামনে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করা হয়। সেসময় একদিকে স্থায়ীকরণে আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ, অন্যদিকে অবস্থান কর্মসূচির আয়োজক চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতি ও বদলিসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। 

এমন অমানবিক কর্মকাণ্ডে চতুর্থ শ্রেণির অনেক কর্মী অন্য পেশায় চলে গেছে। কেউ ২০/৩০ বছর চাকরি করে নিঃস্ব হয়ে মারা গেছেন, কেউবা চাকরি ছেড়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। এখন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা নেমে এসেছে আড়াই হাজারে। 

ড. ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর সুদিনের প্রত্যাশা
নোবেলজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর খুশির বন্যা বইছে গ্রামীণ ব্যাংকের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে। এরই মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংক চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী পরিষদ একজন উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। পরিষদ শ্রম মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং গ্রামীণ ব্যাংকে এ বিষয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে। 

গ্রামীণ ব্যাংকের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলাউদ্দিন আল মামুন বলেন, ‘দেশ চালায় আমাদের প্রাণপ্রিয় প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেলজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূস। আমাদের মতো বঞ্চিত আড়াই হাজার কর্মী আজ আশার আলো দেখছি। এই বিশ্ববরেণ্য মানুষটি জীবনের শেষ দিকে তার প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্র কর্মীদের দাবি নিশ্চয়ই পূরণ করবেন।’

গ্রামীণ ব্যাংকের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের এই আন্দোলনে বহু বছর ধরে আছেন বাসদের (মার্কসবাদী) সংগঠক এবং শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা রাজু আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা এই বঞ্চিত কর্মীদের আন্দোলনে দীর্ঘদিন শ্রম ও সমর্থন দিয়ে আসছি। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অনেক জাতীয় ব্যক্তিত্ব চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণে উচ্চমহলে আলোচনা চালাচ্ছেন। হতদরিদ্র কর্মীদের মুখে হাসি ফুটলে আমাদের আনন্দের সীমা থাকবে না।’

ঢাকা/এস


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়