ঢাকা     সোমবার   ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ১২ ১৪৩১

এক কবরে দাফন চেয়ে ফাঁস নিলেন নববধূ ও প্রবাসী প্রেমিক

কুমিল্লা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২১, ২৮ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ১৩:২১, ২৮ অক্টোবর ২০২৪
এক কবরে দাফন চেয়ে ফাঁস নিলেন নববধূ ও প্রবাসী প্রেমিক

এক কবরে দাফনের অনুরোধ করে চিরকুট লিখে একে-অপরকে ভিডিও কলে রেখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন সদ্য বিবাহিত এক কিশোরী (১৬) ও তার প্রবাসী প্রেমিক (২২)। শনিবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বেতুয়া গ্রামে স্বামীর বাড়ি থেকে ওই কিশোরীর ঝুলন্ত মরদেহ ও চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ।

মেয়েটির বাবার বাড়ি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায়। প্রবাসী তরুণের বাড়ি একই উপজেলার পূর্ব জোড়কানন ইউনিয়নে। মেয়েটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। ১৪ অক্টোবর লালমাইয়ের এক ব্যক্তির সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেয় পরিবার। ঘরোয়াভাবে গোপনে এই বাল্যবিবাহের আয়োজন করা হয়েছিল।

আত্মহত্যার আগে মেয়েটি চিরকুটে লিখেছে, চাইছিলাম দুজনে একসাথে বেঁচে থাকতে। বাঁচতে দিল না...আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। ও বেঁচে থাকলেও তোমরা ওকে খুন করতে এবং ওর ফ্যামিলিকে জেলের ভাত খাওয়াইতে। তাই নিজেও দুনিয়া ছাড়লাম, ওরেও আমার সাথে নিয়ে গেলাম। আপনাদের কাছে একটা শেষ ইচ্ছা। বাবা-মা, ভাই বোনের কাছে একটা আবদার, দুনিয়াতে যেহেতু থাকতে দেয় নাই আমাদের দাফনটা যেন একসাথে হয়। একদিন আগে পরে হলেও একই কবরস্থানে যেন দাফন করে।

প্রবাসী ওই তরুণ মৃত্যুর আগে লিখেছেন, শেষ ইচ্ছে পূরণ করার দায়িত্ব আপনাদের। আমার মৃত্যুর কারণ একমাত্র ওর ফ্যামিলি। আমার মোবাইলে সব রেকর্ড করা আছে। সবকিছু ভিডিও করা আছে। আমার মৃত্যুর জন্য কে কে দায়ী সব কিছু আমার মোবাইলে রেকর্ড করা আছে আর ভিডিও করা আছে। আমার মোবাইল তার প্রমাণ। আমার মোবাইল চেক করলে সব পাবেন। রেকর্ড অপশনে আর গ্যালারিতে সব আছে। ৮টা ভিডিও আছে। সবগুলো দেখবেন। লক খুলে রেকর্ড অপশনে ঢুকবেন, ইমোতে দুইটা আর বাকিগুলো গ্যালারিতে পাবেন। তার দেওয়া চিঠি আছে আরিফ নামের আইডিতে। আমাদের মৃত্যুর কারণ তারা। কোনোদিন ক্ষমা করব না।

কিশোরীর মা বলেন, আমার মেয়ের সঙ্গে এক প্রবাসী ছেলের সম্পর্ক ছিল। ১৪ অক্টোবর ওর সম্মতি নিয়েই বিয়ে দিই। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে সে হাসি-খুশিতেই ছিল। শনিবার রাতে খবর পাই, মেয়ে ও তার প্রেমিক আত্মহত্যা করেছে।

প্রবাসী তরুণের বাবা বলেন, এক বছর আগে ছেলেকে ওমান পাঠিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে শুনি, ছেলে বিদেশে কর্মস্থলে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। খবর নিয়ে জানি, দেশে এক মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। সেই মেয়ের বিয়ের খবরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। শনিবার রাতে সেই মেয়ে আর আমার ছেলে একে-অপরকে ভিডিও কলে রেখে চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছে।

লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, বিয়ের ১৩তম দিনে এক কিশোরী ও তার প্রবাসী প্রেমিক একে-অপরকে ভিডিও কলে রেখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিশোরীর মরদেহের পাশে হাতে লেখা একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আত্মহত্যার আগে মেয়েটি তার মা-বাবার উদ্দেশ্যে এটি লিখেছিল।

রুবেল/কেআই


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়