সড়কের ওপর দেয়াল নির্মাণ, অবরুদ্ধ মাদরাসাসহ অর্ধশত পরিবার
সাভার প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
সাভারের ধামরাইয়ে দীর্ঘদিনের চলাচলের রাস্তার ওপর দেয়াল নির্মাণ করায় অন্তত অর্ধশত পরিবার ও একটি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পরেছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চান তারা।
জানা গেছে, গত ১৯ অক্টোবর উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়নের চরপাড়া এলাকার ওই সড়কের ওপর প্রায় ৩ ফুট উচ্চতার দেয়ালটি নির্মাণ করা হয়।
এ ঘটনায় গত ২৩ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন সড়কের ওই স্থানটির একাংশের জমির মালিক নিলুফা আক্তার ও আব্দুল মজিদ।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চরপাড়া এলাকায় প্রবেশে প্রায় ৪৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ছয় ফুট প্রশস্ত সড়ক রয়েছে। ওই সড়কের প্রবেশমুখে প্রায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ছয় ফুট প্রশস্ত জমির মালিক দুই ব্যক্তি। এর মধ্যে তিন ফুট জমির মালিক অভিযোগকারীরা। আর বাকি আড়াই ফুট জমির মালিক নুরু মিয়া নামে এক ব্যক্তি। গত ১৯ অক্টোবর নুরু মিয়া নিজের আড়াই ফুট জমিসহ পুরো ছয় ফুট জুড়েই বাড়ির দেয়াল নির্মাণ শুরু করেন। এরই মধ্যে প্রায় ৩ ফুট দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এর জেরে সড়কের প্রবেশমুখ বন্ধ হয়ে পড়েছে। আর ৩০ বছর ধরে ওই সড়ক ব্যবহার করা স্থানীয় অন্তত ৫০টি পরিবারের লোকজন ও সড়কের পাশে থাকা মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের প্রবেশমুখ জুড়ে ওই দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই দেয়ালের ওপর দিয়ে ও ঘুরে অন্য পাশ দিয়ে চলাচল করছেন।
এলাকাবাসী জানায়, কালামপুর থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্প যাওয়ার সড়কের চরপাড়া এলাকায় মূল সড়ক থেকে এলাকায় প্রবেশে একটি ছয় ফুট প্রশস্ত ৪৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের সড়ক রয়েছে। এই সড়কের উভয় পাশে প্রায় অর্ধ শতাধিক পরিবারের বসবাস। এছাড়া রয়েছে একটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রায় ৩০ বছর ধরে সড়কটি ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা। তবে গত ১৯ অক্টোবর সড়কের প্রবেশ মুখের প্রায় ৪০ ফুটের ওপর দেয়াল নির্মাণ করেন নুরু মিয়া নামে এক ব্যক্তি। এতে ওই এলাকার বাসিন্দা ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
মো. ইসমাইল হোসেন নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমরা ছোট বেলা থেকে এই সড়ক দিয়ে আসা যাওয়া করতাম। এখানে অনেক পরিবার ও একটি মাদরাসা রয়েছে। আশেপাশে বিকল্প সড়ক নেই। হঠাৎ এই সড়কের ওপর ওয়াল করা হয়েছে। এখন সবাইকে অনেকটা পথ ঘুরে এখানে আসতে হচ্ছে। আমাদের সবার অনেক কষ্ট হচ্ছে। মাদরাসার শিশু শিক্ষার্থীদের আসার পথ নেই।
সড়কের পাশেই বাড়ি ব্যবসায়ী মোস্তফা হারুনের। তিনি বলেন, আমার বাড়ির চলাচলের রাস্তা গত ১৯ অক্টোবর থেকে বন্ধ করে দিয়েছে এক ব্যক্তি। সড়কের ওপর তিনি বাড়ি নির্মাণ করছেন। এতে আমিসহ পুরো এলাকার অন্তত ৫০টি পরিবার ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছি। এখানে মাদরাসা ছাত্ররাও চলাচল করতে পারছে না। এখন আমরা সড়কটি সচল করতে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এ সড়ক পার হয়ে যেতে হয় স্থানীয় রওজাতুল কুরআন কালামপুর মাদরাসায়। ওই মাদরাসার শিক্ষা সচিব হাফেজ মাওলানা মো. নাজমুল হক বলেন, আমাদের ৬৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের আসা-যাওয়ার যে সড়ক ছিল সেটির ওপর একটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। বাড়ি নির্মাণের কারণে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের চলাচলের সময় অসহনীয় কষ্ট হচ্ছে। অনেক দূর দিয়ে ঘুরে মাদরাসায় আসতে হচ্ছে। এছাড়া এলাকাবাসীও যাতায়াত করতে পারছে না।
এ বিষয়ে সড়কের জমির একাংশের মালিকের ছেলে আল আমিন বলেন, আমাদের জমিতে আমরা বাড়ি বানাচ্ছি। আগে যখন কৃষি জমি ছিলো তখন রাস্তা দিয়েছি। এখন আর রাস্তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর পরেও যদি এটা নিয়ে কথা হয় তাহলে আগামী শনিবার লোকজন নিয়ে বসবো।
ধামরাই উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশান্ত কুমার বৈদ্য বলেন, কেউ অন্যায়ভাবে মানুষের চলাচলের পথ আটকে রাখার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সরেজমিন তদন্তের জন্য একজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরিফুল/ইমন