নড়াইলে ৩ গরু চোরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, আসামি ২ হাজার
নড়াইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
নড়াইলের তুলারামপুর গ্রামে তিন গরু চোরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় নড়াইল সদর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে ১৫শ’ থেকে ২ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে মামলাটি রুজু হয় বলে জানিয়েছেন নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম।
ঢাকা-কালনা-বেনাপোল ভায়া নড়াইল মহাসড়কের পাশের বাড়িগুলোতে গরু চোরের উপদ্রব বেড়েছে। এসব এলাকায় প্রায় রাতেই গরু চুরি হচ্ছে। গত পাঁচ মাসে তুলারামপুর, দুর্বাজুড়ি ও আবাদ গ্রাম থেকে ২৮টি গরু চুরির অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে এলাকাবাসী গরু চুরি ঠেকাতে প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে রাতে গ্রাম পাহারার ব্যবস্থা করেছে।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাত ৩টার দিকে তুলারামপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনাসার্জেন্ট তরফদার বখতিয়ার হোসেন হান্নানের বাড়িতে একদল গরু চোর প্রবেশ করে। এ সময় কুকুরের ডাকে বাড়ির মালিক টের পেয়ে যান। পরে তিনি তুলারামপুর ও বেতেঙ্গা গ্রামের কয়েকজনকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানায়। তখন প্রতিরোধ কমিটির লোকজন বিভিন্ন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে কয়েক গ্রামের ২/৩ হাজার মানুষ ওই এলাকা ঘেরাও করে গরু চোর সন্দেহে ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা করে। এসময় অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
নিহতরা হলেন-বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার আলাদীপুর গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে নূরনবী (৩০),একই উপজেলার পূর্ব জাহাঙ্গীরাবাদ গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে দুলাল মিয়া (২৮) এবং নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কোটাকোল ইউপির তেলকাড়া গ্রামের হাফিজুর শেখের ছেলে জান্নাতুল শেখ (৩০)। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে নড়াইল জেলার বিভিন্ন গ্রামে গরুসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে আসছে বলে এলাকাবাসীর ধারণা।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকালে সরেজমিনে গেলে দক্ষিণ তুলারামপুর গ্রামের শিহাব উদ্দীন জানান, গরু চোরের উপদ্রব বেড়েছে। গত কিছুদিনের মধ্যে রেজাউল তরফদারের ২টি, আব্দুর রহিমের ৪টি, ফয়জুর মোল্যার ৪টি,কামরুল ইসলামের ২টি, আবাদ গ্রামের প্রশান্ত বিশ্বাসের ৪টি, পূর্ব তুলারামপুর গ্রামের শামিম সিকদারের ২টি, ফকরুজ্জমান মোল্যার ৩টি, নিজামউদ্দিন মোল্যার ১টি, আলমগীর মোল্যার ১টি এবং পার্শ্ববর্তী দুর্বাজুড়ি গ্রাম থেকে ২ জনের ৫টি গরু চুরি হয়েছে।
তুলারামপুর গ্রামের কলেজ শিক্ষক রেজাউল তরফদার জানান, গত ৫ মাস আগে তার দুটি গরু চুরি হয়। এ সময় চোরেরা তাদের ঘরের জালানার ফাঁক দিয়ে স্প্রে-এর মাধ্যমে অজ্ঞান করে ২টি গরু নিয়ে যায়। এভাবে অধিকাংশ বাড়িতেই তারা রাতের বেলায় স্প্রে করে গরু চুরি করছিল। গত ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর নড়াইল পৌরসভার উজিরপুর ও বিড়গ্রামে গরু চুরি করতে গেলে গ্রামবাসী দুইজন গরু চোরকে পিটিয়ে মেরে ফেলে।
নড়াইল জজ আদালতের অ্যাডভোকেট আব্দুস ছালাম খান বলেন, ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারো নেই। কোনো ব্যক্তি অন্যায় এবং অপরাধ করলে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে।’
নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, নিহতদের উদ্ধার করে নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হন্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১৫শ’ থেকে ২ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করে সদর থানায় মামলা হয়েছে।
মব জাস্টিস বা গণপিটুনির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রতিটি সচেতন নাগরিকের সহযোগিতার পাশাপাশি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে পুলিশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানান তিনি।
শরিফুল/টিপু