ঢাকা     শুক্রবার   ০১ নভেম্বর ২০২৪ ||  কার্তিক ১৭ ১৪৩১

রমেক অধ্যক্ষের পদত্যাগের আল্টিমেটাম 

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০০, ১ নভেম্বর ২০২৪  
রমেক অধ্যক্ষের পদত্যাগের আল্টিমেটাম 

রংপুর মেডিক্যাল কলেজের সদ্য দায়িত্ব পাওয়া অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমানের পদত্যাগের দাবিতে দ্বিতীয় দিনেও উত্তপ্ত ছিলো রংপুর মেডিক্যাল কলেজ। আগামী তিন দিনের মধ্যে তাকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম ঘোষণা করা হয়। একই সাথে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুশিয়ারি দেন বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, কর্মচারী ও ছাত্র-জনতা।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজের সামনে আন্দোলন করে এ দাবি জানান তারা।

এসময় শিক্ষক শিক্ষার্থীরা বলেন, বিগত সময়ে কলেজের ভাইস প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালনকালে আওয়ামী সরকারের দোষর হিসেবে ডা. মাহফুজ কাজ করেছেন। এছাড়াও গণঅভ্যর্থন পূর্ববর্তী সময়ে ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ আবু সাঈদের পোস্টমর্টেমের রিপোর্টও বিকৃত করতে অপ-চেষ্টাও করেছেন ডা. মাহফুজার রহমান। একই সাথে ক্যাম্পাসের নানা বিষয়ে সুবিধাভোগ করাসহ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে পৃষ্ঠপোষক করার অভিযোগ তোলেন শিক্ষার্থীরা। 

এমন একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে কিভাবে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সেটি নিয়ে বিব্রত কলেজের অন্য শিক্ষকরাও। পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের শামিল হন তারও। কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাওয়া ডা. মাহফুজারকে আগামী তিন দিনের মধ্যে পদত্যাগ করার দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। অন্যথায় কলেজের একাডেমিক প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দুর্বার আন্দোলনের ঘোষণা দেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। 

রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজিবুল ইসলাম বলেন, গণঅভ্যুত্থান পূর্ববর্তী সময়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজের দায়িত্বে থাকা ভাইস প্রিন্সিপাল ডা. মাহফুজার রহমান নানাভাবে শহীদ আবু সাঈদ এর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পরিবর্তন করতে অপচেষ্টা চালিয়েছিলো। যার ফলে শহীদ আবু সাঈদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ৬ বার পরিবর্তন হয়েছিল। তাই তিনি সদ্য অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পাওয়ায় আমরা বিব্রত। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ৪৭তম ব্যাচের ইন্টার্ন চিকিৎসক রিয়াজ শরীফ লিমন জানান, ২৪ এর বিপ্লবের অন্যতম মহানায়ক শহীদ আবু সাঈদের রিপোর্ট নিয়ে মেডিক্যালে বসে ষড়যন্ত্র করেছিল ডা. মাহফুজ। তাকে দ্রুত রংপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ ও কলেজ থেকে অপসারণ এর দাবি করেন তিনি। একই সাথে আগামী শনিবারের মধ্যে সরকারিভাবে তাকে ওই পদ থেকে অপসারণ করা না হলে কলেজের সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। 

পরে কলেজের মূল ফটক থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এসময় সদ্য নিয়োগ হওয়া অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজারকে দোষর আখ্যা দিয়ে পদত্যাগের দাবিতে নানামুখী স্লোগান দিতে থাকে আন্দোলনকারীরা। 

এদিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষর রুমে গিয়ে ডা. মাহফুজার রহমানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে সেখানে দেখা যায় তার কক্ষে তালা ঝুলানো। দরজা বন্ধ করে সাঁটানো হয়েছে পদত্যাগের দাবি সম্মিলিত বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, কর্মচারী ও ছাত্র জনতার একটি ব্যানার। 

তবে ছাত্র শিক্ষকের আল্টিমেটামের ২ ঘণ্টা পরে নগরীর রায়ান্স হোটেলের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলন করে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমান। নিজেকে অরাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় দিয়ে জানান, একটি মহল তার এই অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের বাহিরের কিছু লোককে সংযুক্ত করে ছাত্রদেরকে উসকিয়ে দিয়ে আন্দোলন করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। একই সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার না চাইলে অধ্যক্ষ পদ থেকে সরে যাবেন বলেও জানান ডা. মাহফুজার রহমান।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রংপুর মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ থেকে অধ্যক্ষ পদে পদায়ন করা হয় ডা. মাহফুজার রহমানকে।

আমিরুল/ইমন


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়