‘পলো বাওয়া উৎসব’ দেখতে আদমপুর বিলে মানুষের ঢল
ফরিদপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
গ্রাম বাংলার পুরনো একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব হচ্ছে পলো বাওয়া। এক সময় গ্রাম এলাকাজুড়ে বর্ষা মৌসুম শেষে পলো দিয়ে নদী-নালা ও খাল-বিলে সারিবদ্ধভাবে মাছ শিকার করতে দেখা যেতো। হারিয়ে যেতে বসেছে এই ‘পলো বাওয়া উৎসব’।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকালে ফরিদপুর সদরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের আদমপুর বিলে আয়োজন করা হয় ‘পলো বাওয়া উৎসব’। আর এতে কয়েক হাজার সৌখিন মাছ শিকারি অংশ নেয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খুব ভোরেই আদমপুর বিলে হৈ হৈ করে একসাথে পলো-জাল হাতে মাছ শিকারে নেমে পড়েন সবাই। ঝপ ঝপ শব্দের তালে তালে চলতে থাকে পলো বাওয়া। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী এ উৎসবে আশেপাশের গ্রামের নানা বয়সের লোকজন মেতে উঠেন। বিলের মধ্যে নানা বয়সের মানুষ মাছ ধরতে নামলে তাদের মাছ ধরা দেখতে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন গ্রামের নারীরাও। নানা প্রজাতির মাছ ধরে হাসিমুখে ফিরতে দেখা যায় সৌখিন মাছ শিকারীদের।
স্থানীয়রা জানান, একসময় পলো দিয়ে মাছ শিকারের অপরুপ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হতো গ্রামের ছোট-বড় সকল বয়সী মানুষ। কম বেশি প্রায় সবাই বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করতো। আর সেই মাছ দিয়ে পরিবারের সকলে আনন্দের সাথে রান্না করে খেতো। কিন্তু সেই বাংলার ঐতিহ্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন নেই নদী-নালায় পানি যতোটুকু আছে সেখানে অসাধু মাছ শিকারিদের নানা ফাঁদের কারণে সাধারণ মানুষ মাছ ধরার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এবার মাছ ধরার সেই ঐতিহ্য ফিরে যাওয়ার চেষ্টায় আদমপুর বিলে পলো দিয়ে মাছ শিকার উৎসবের আয়োজন করা হয়। আর এতে কয়েক হাজার সৌখিন মাছ শিকারি অংশ নেন।
এলাকাবাসী জানায়, পূর্ব থেকেই নির্ধারিত ছিল শুক্রবার সকালে আদমপুর বিলে পলো দিয়ে মাছ শিকার করা হবে। এ সংবাদে কয়েকটি গ্রাম থেকে সৌখিন মাছ শিকারির ভোর থেকে জড়ো হয় বিল পাড়ে।
মাছ শিকারি ও উৎসুক একাধিক জনতা জানান, যান্ত্রিক যুগে আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম পলো দিয়ে মাছ ধরার গল্প। আজ এই উৎসবের মধ্য দিয়ে শৈশবকে ফিরে পেলাম।
আয়োজকদের মধ্যে মো. মুরাদ হোসেন জানান, স্থানীয় প্রশাসনের আন্তরিকতা থাকলে উন্মুক্ত জলাশয়ে কারেন্ট জাল বা চায়না দুয়ারি দিয়ে দেশীয় মাছের বংশক্রম ধ্বংস করতে পারতো না। প্রশাসন আন্তরিক না হলে এক সময় দেশীয় মাছ চায়না জাল, কারেন্ট জালের বুকে বিলীন হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে গ্রামীণ ঐতিহ্য পলো দিয়ে মাছ শিকারের মতো নানা উৎসবও।
তামিম/টিপু