তরিকুল ইসলাম আদর্শের সঙ্গে বেঈমানি করেননি: তারেক
নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর || রাইজিংবিডি.কম
তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তৃতা করেন
প্রায়ত বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম জীবনে আদর্শের সঙ্গে বেঈমানি করেননি বলে মন্তব্য করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিগত স্বৈরাচার এরশাদ আমলে, ফ্যাসিস্ট পতিত স্বৈরাচার হাসিনার আমলে এবং ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে তরিকুল ইসলাম বার বার কারাবরণ, হামলা, মামলার শিকার হয়েছেন কিন্তু তিনি আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য তরিকুল ইসলামের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত স্মরণসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন। তারেক রহমান এখন যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।
তারেক রহমান বলেন, তরিকুল ইসলাম আমৃত্যু মা, মাটি ও মানুষের মুক্তির সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করেন। আজকের নতুন প্রজন্মকে তরিকুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবন ও শিষ্টাচার থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ব্যক্তিগত লাভবান বা অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে যিনি বা যারা রাজনীতি করেন বা করেছেন, তাদের পরিণতি দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন। পতিত স্বৈরাচার ফ্যাস্টিদের পরিণতি কী হতে পারে, তা দেশের মানুষ ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে উপলব্ধি করেছেন।
তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশ হতে হবে শোষণ, নির্যাতন ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ। আর মানুষের ও গণবিপ্লবের সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে ঐক্যবদ্ধতার বিকল্প নেই।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। মরহুম তরিকুল ইসলামের বর্ণাঢ্য জীবনের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরে বক্তৃতা করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যশোর বারের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম, ডা. হারুন অর রশীদ, প্রেস ক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, অধ্যাপক আয়ুব হোসেন, তন্ময় সাহা, এজেড এম সালেক, মোশারফ হোসেন, মাওলানা বেলায়েত হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর প্রমুখ।
স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মরহুম তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী অধ্যাপক নার্গিস বেগম, দুই সন্তান শান্তুনু ইসলাম সুমিত ও অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান খান, গোলাম রেজা দুলু, সাবেক পৌর মেয়র মারুফুল ইসলাম মারুফ, একেএম শরফুদ্দৌলাহ ছটলু প্রমুখ।
তরিকুল ইসলামকে স্মৃতিচারণ করে তারেক রহমান বলেন, ‘‘ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে আমি ও তরিকুল ইসলাম সাহেব একসঙ্গে কারাবরণ করেছি। একদিন পিজি হাসপাতালে কিছু সময়ের জন্য তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয় ও খুব সামান্যই কথা হয়। জীবনে প্রথম কারাবরণ করায় আমি কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। আমাকে দেখে তরিকুল ইসলাম সাহেব বললেন, ‘তারেক বুকে সাহস রাখ, নিজেকে শক্ত রাখ, ইনশাল্লাহ একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে’। সেই কথা শুনে আমি কিছুটা হলেও সাহস পেয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, রাজনীতি করার কারণে তরিকুল ইসলামকে এরশাদ সরকারের আমলে কিছু দিন গুম করা হয়। তারপর তিনি বহু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন। বহু মিথ্যা মামলায় তাকে আটক করে রাজনৈতিক আদর্শচ্যুত করার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু তিনি ততই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আাদর্শের প্রতি অটুট ও অবিচল থেকে মাটি ও মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘মরহুম তরিকুল ইসলাম বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন। তিনি তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কর্ম দিয়ে ধীরে ধীরে দলের যুগ্ম মহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, ভাইস চেয়ারম্যান ও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি বহুবার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তারপরও তিনি শেকড়ের কথা ভোলেননি, তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে তাঁর সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। আমিও মরহুম তরিকুল ইসলামের এই গুণ থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃণমুলের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করছি। মানুষের ভালোবাসা অর্জনের জন্য এ যোগাযোগের বিকল্প নেই।’
তারেক রহমান বলেন, হাসিনাসহ অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন কিন্তু তাদের দোসর, পেতাত্মরা সর্বত্র বসে আছে। তারা প্রশাসনকে অস্তিতিশীল করে নিজেদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। মনে রাখতে হবে, এ সব পতিত স্বৈরাচারের দোসদরা সময়-সুযোগ বুঝে ফের জাতির ঘাড়ে চেপে বসতে পারে। আপনারা যারা জাতীয়তবাদের আদর্শ বুকে লালন করেন, তাদের বজ্র-কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সব রকম ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে দেশকে সত্যিকারের গণতন্ত্রের পথে নিতে হবে। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তরিকুল ইসলামের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিলে তারেক রহমান অংশ নেন।
রিটন/বকুল