জামায়াতকর্মী হত্যার ১০ বছর পর মামলা, আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার
গাইবান্ধা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা শাহাবুদ্দিন মণ্ডল
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় জামায়াতে ইসলামীর কর্মী শাহাবুল ইসলাম হত্যা মামলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাহাবুদ্দিন মণ্ডলকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার (১০ নভেম্বর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ।
শাহাবুদ্দিন মণ্ডল উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের উত্তর সাহাবাজ গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত কর্মী শাহাবুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান ভোট দিতে উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মনমথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে যান। এ সময় ভোটকেন্দ্রের বাইরে তাদের দেখে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ওই সময় মামলার আসামিসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ৪০ থেকে ৫০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী দেশি অস্ত্র নিয়ে মিজানুরের ওপর হামলা চালায়। সেসময় নিজেকে বাঁচাতে একটি বাঁশঝাড়ের ভিতরে আশ্রয় নেন মিজানুর। পরে আসামিরা তাকে ঘিরে ধরে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় মিজানুরকে রক্ষা করতে এগিয়ে যান শাহাবুল। এক পর্যায়ে আসামিরা দেশিয় অস্ত্র দিয়ে শাহাবুলকেও এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। পরে আশপাশের লোকজন শাহাবুল ও মিজানুরকে উদ্ধার করে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহাবুলকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া গুরুতর আহত মিজানুরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে পাঠানো হয়।
এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও নিহতের পরিবারের লোকজন মামলা করতে পারেননি। অবশেষে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর নিহতের ছোট ভাই শাহজাহান কবির বাদী হয়ে গত ২২ অক্টোবর সুন্দরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় গাইবান্ধা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের স্ত্রী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতিসহ ৭৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার (৮ নভেম্বর) দিবাগত রাতে আসামি শাহাবুদ্দিন মণ্ডলকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার (৯ নভেম্বর) বিকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
নিহতের ছোট ভাই শাহজাহান কবির বলেন, ‘আমার ভাইকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। ১০ বছরের অধিক সময় ধরে আমরা এত বড় কষ্ট মুখ বুঝে সহ্য করেছি। ওই সন্ত্রাসীদের ভয়ে এতদিন মামলা হয়নি। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ রাইজিংবিডি-কে বলেন, এ মামলায় সাবেক প্রয়াত এমপি লিটনের স্ত্রীসহ ১২৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আসামি শাহাবুদ্দিন মণ্ডলকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে বাকি আসামিদের দ্রুতই গ্রেপ্তার করা হবে।
লুমেন/বকুল