ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১১ ১৪৩১

শ্রমিক অবরোধে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক ৩৩ ঘণ্টা বন্ধ, দুর্ভোগ চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৩, ১০ নভেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৯:০৮, ১০ নভেম্বর ২০২৪
শ্রমিক অবরোধে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক ৩৩ ঘণ্টা বন্ধ, দুর্ভোগ চরমে

শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

বকেয়া বেতনের দাবিতে টানা ৩৩ ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন টিএনজেড গ্রুপের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। তাদের অবরোধের কারণে মহাসড়কে টঙ্গী থেকে মাওনা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতকারীরা যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন।

গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল ৯টায় মহাসড়ক অবরোধ করেন। এরপর থেকে আজ রোববার (১০ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। ঘটনাস্থলে সেনা সদস্য, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। তারা শ্রমিকদের বুঝানোর চেষ্টা করছেন। 

অবরোধের কারণে সড়কের দুই দিকে দীর্ঘ জটে আটকা পড়া যানবাহন থেকে যাত্রীরা নেমে বিভিন্নভাবে তাদের গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন। যানজটের শেষপ্রান্তে থাকা যানবাহনগুলো বিকল্প পথে গন্তব্যে যাচ্ছে। তবে যে যানবাহনগুলো যানজটে আটকা পড়ে গেছে, সেগুলো আর বের হতে পারছে না।

আরো পড়ুন:

আন্দোলনরত শ্রমিকেরা পালা করে অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিকেলে দুই থেকে আড়াইশত শ্রমিক সড়কে অবস্থান নিলেও উৎসুক জনতা ও সাধারণ মানুষের কারণে তাদের আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে লাঠিসোঁটা হাতে কিছু বহিরাগত যোগ দিয়েছেন। শ্রমিকদের অবরোধস্থলের উভয়পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ সব গাড়ি গত রাতে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করে আটকা পড়ায় আর কোনো দিকে যেতে পারেনি। আটকেপড়া ট্রাকে পচনশীল পণ্য রয়েছে। যাত্রীবাহী বাস থেকে যাত্রীরা নেমে পায়ে হেঁটে বা বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। ফলে যানবাহন যাত্রীশূন্য দাঁড়িয়ে রয়েছে।

পুলিশ ও শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় অবস্থিত টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের গত তিন মাসের বেতন বকেয়া আছে। শ্রমিকেরা তিন মাস ধরে বেতন দাবি করলেও কর্তৃপক্ষ কালক্ষেপণ করছে। গত ২৮ অক্টোবর শ্রমিকেরা আন্দোলন করলে শিল্প পুলিশ ও সেনা সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করেন। তখন পুলিশ জানায়, নভেম্বরের ৩ তারিখ বেতন পরিশোধ করা হবে। সেই দিন শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ৫ নভেম্বর আবারও শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করলে শিল্প পুলিশ ও সেনা সদস্যরা এ বিষয়ে সমাধান করার আশ্বাস দিলে তাঁরা ফিরে যান। তবে মাসের ৯ তারিখ হয়ে গেলেও তারা বেতন পাচ্ছেন না। তা ছাড়া কারখানা বেশ কিছু দিন ধরে বন্ধ আছে। এসব কারণে শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল থেকে আবারও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকেরা।

শ্রমিকরা বলছেন, ‘আমরা বেতন পাই এটা আমাদের নায্য দাবি। গতকাল হতে আমরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছি। বেতন না নওয়ে বাসায় ফিরব না। আমাদের ঘরভাড়া বাকি, দোকানে বাকি; বেতন না পেলে আমরা কোনোভাবেই চলতে পারছি না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরাও আমাদের এ দাবিতে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। মালিক কোথায় রয়েছেন, এটা আমাদের দেখার বিষয় না, আমাদের বেতন দরকার।’ 

গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, ‘শনিবার আন্দোলনের শুরু থেকে সকলে মিলে শ্রমিকদের বলেছি, সড়কটা ছেড়ে দিয়ে সরে যাওয়ার জন্য। তারা শুনছেন না। সেনা সদস্যরাও তাদের আশ্বাস দিয়েছেন, তবুও মানছেন না। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রচুর লোক যাতায়াত করেন। আমরা তাদের আপাতত বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছি।’

রেজাউল/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়