ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৭ ১৪৩১

বকেয়া বেতন-কারখানা খোলার দাবি 

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ৪৭ ঘণ্টা ধরে অবরোধ, ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ১১ নভেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১০:২৯, ১১ নভেম্বর ২০২৪
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ৪৭ ঘণ্টা ধরে অবরোধ, ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ

বকেয়া বেতন ও কারখানা খোলার দাবিতে গাজীপুরে টানা প্রায় ৪৭ ঘণ্টা ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা। কোনও আশ্বাস ও কথাই শুনতে নারাজ শ্রমিকরা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সড়কেই অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন তারা। অবরোধের কারণে মহাসড়কে টঙ্গী থেকে মাওনা পর্যন্ত প্রায় ৩০-৩৫ কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ঢাকা, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতকারী যাত্রীরা। শ্রমিকদের রাস্তা অবরোধে ক্ষুব্ধ চালক, এলাকাবাসী ও সাধারণ মানুষ। 

গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা গত শনিবার সকাল ৯টায় মহাসড়ক অবরোধ করে। সোমবার (১১ নভেম্বর) সকালেও অবরোধ অব্যাহত রয়েছে। সকাল থেকেই আন্দোলনে থাকা শ্রমিকরা সড়কে ভাগ ভাগ হয়ে অবস্থান নিয়েছে। দুই থেকে আড়াইশো শ্রমিক সড়কে অবস্থান নিলেও উৎসুক জনতা ও সাধারণ মানুষের কারণে তাদের আলাদা করা কঠিন। 

সাধারণ মানুষ বলছেন, সবকিছুর একটা সীমা থাকা দরকার। দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক আজ তিনদিন ধরে বন্ধ। এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। মানুষ চলাচল করতে পারছে না। দূরপাল্লার কোনো গাড়ি চলছে না। রোগী নিয়ে হাসপাতাল পর্যন্ত যাওয়া যাচ্ছে না। কার্যত অচল হয়ে গেছে গাজীপুর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কি করে। যেকোনো মূল্যে এদের মহাসড়ক থেকে না সরালে সাধারণ মানুষ ও চালকরা পদক্ষেপ নিতে পারে। 

ময়মনসিংহ থেকে চাঁদপুরগামী হায়দার নামে এক ট্রাক চালক বলেন, দুইদিন ধরে সড়কে রয়েছি। কোথাও যেতে পারছি। অনেক ট্রাকে পচনশীল পণ্য রয়েছে। যাত্রীবাহী বাস থেকে যাত্রীরা নেমে গেছে দুদিন আগে কিন্তু বাস আগের স্থানেই রয়েছে। খুব বিরক্ত হয়ে গেছি। 

নিপা সরকার নামে একজন বলেন, গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ যাওয়া খুব দরকার। যানজটের কারণে যেতে পারছি না। কবে রাস্তা ঠিক হবে কেউ বলতে পারছে না। শ্রমিকদের দাবি মেনে নিলেই তো হয়। 

শাখাওয়াত হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, অবিলম্বে ওই গার্মেন্টসের মালিককে গ্রেপ্তার করা হোক। মানুষ বিরক্ত হয়ে গেছে। এটা কোনো কথা তিনদিন ধরে রাস্তা বন্ধ। সরকার চাইলে ১ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান করতে পারে। 

পুলিশ ও শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় অবস্থিত টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের গত তিন মাসের বেতন বকেয়া আছে। শ্রমিকেরা তিন মাস ধরেই বেতন দাবি করলেও কর্তৃপক্ষ  কালক্ষেপণ করছে। ২৮ অক্টোবর শ্রমিকেরা আন্দোলন করলে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করে। তখন পুলিশ জানায়, নভেম্বরের ৩ তারিখ বেতন পরিশোধ করা হবে। সেই দিন শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ৫ নভেম্বর আবার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করলে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এ বিষয়ে সমাধান করার আশ্বাস দিলে তারা ফিরে যান। তবে মাসের ৯ তারিখ হয়ে গেলেও শ্রমিকেরা বেতন পাচ্ছেন না। এছাড়া কারখানা বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ আছে। এসব কারণে শনিবার সকাল থেকে আবারও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকেরা। 

এদিকে প্রথম দিন থেকেই শ্রমিকরা বলছেন, আমরা তিন মাসের বেতন পাই এটা আমাদের ন্যায্য দাবি। কোনো আশ্বাস মানি না, বেতন দিলেই রাস্তা ছাড়বো। 

শ্রমিকনেতা আরমান হোসাইন বলেন, আমরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের ধৈর্য ধরতে বলেছি। তারা বলেছেন তিন মাস ধৈর্য ধরেছি আর না। আমাদের কথা হচ্ছে মহাসড়ক অবরোধ রাখায় যে ভোগান্তি হচ্ছে এটি দ্রুত সমাধান করা। আশুলিয়া আর গাজীপুর মিলে ৮-১০টা কারখানায় মূলত ঝামেলা দেখছি। তাদের পাওনাও খুব বেশি না। প্রয়োজনে ওইসকল মালিকদের কিছু সম্পদ বিক্রি করে হলেও পাওনা পরিশোধ করুক। আজ আমরা আবারও শ্রমিকদের সঙ্গে বসবো। 

গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, শ্রমিকদের বুঝানো হয়েছে কিন্তু কোনো কথাই শুনছে না তারা। তারা বেতন না নিয়ে মহাসড়ক ছাড়বে না। তাদেরকে আজও বুঝানো হচ্ছে। যেহেতু দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে, এজন্য আপাতত বিকল্প যে রাস্তা রয়েছে তা ব্যবহার কতে বলা হয়েছে।

রেজাউল/ইমন


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়